অখণ্ডালন্দ ভারতের নানা তীর্থ দর্শন অভিলাষে সাধুর সঙ্গে বাটী ত্যাগ করিবার পর, র্তাহার মনে পিতামা তার স্নেহের আকর্ষণ প্রবল হওয়ায়, একমাস পরে ভ্রমণসঙ্কল্প ত্যাগ করিয়া দাড়ীতে ফেরেন । অখণ্ডানন্দ স্বামী বিবেকানন্দের পরিব্রাজক অবস্থায়: বহুবার সঙ্গী ও সহচররূপে ভারতের নানা তীর্থে, সহরে ভক্তগণের আবাসে এবং হিমালয়ের নানা উচ্চশিখরে পত্রিমণ করিয়াছিলেন । একেলাও তিনি অনেকবার পরিব্রাজ করপে তীর্থপর্য্যটনাদি করিয়াছেন এবং রামকৃষ্ণ শিষ্যমণ্ডলীর মধ্যে তিনিই প্রথম তিববতে যাইয়া বৎসরকাল বাস করেন এবং সেখানকার ভাষা, আচার-ব্যবঙ্গার, ধৰ্ম্ম ব্যবস্থা ও ধৰ্ম্মগ্রন্থাদি পাঠ করিয়াছিলেন । তাহার লিখিত ‘তিববতে তিন বৎসর’ নামক প্রবন্ধ রামকৃষ্ণ মিশনের মুখপত্র ‘উদ্বোধনে ধারাবাহিকরূপে প্রকাশিত হইয়াছিল । রামকৃষ্ণ মিশনের সেবাকীর্য্যের তিনিই প্রথম প্ৰবৰ্ত্তক । স্বামী বিবেকানন্দের প্রবৰ্ত্তিত সেবাধায় প্রতিমার তিনিই প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা এবং এই জন্ম তিনি স্বামীজীর নিকট হইতে বহু সমাদর লাভ করিয়াছিলেন । র্তাহাকে লিগিত স্বামীজীর পত্রাবলী হইতে স্বামী অথণ্ডানন্দের অনেক কৰ্ম্ম প্রচেষ্টার তিন জীবনী-কোষ 8는● পরিচয় পাওয়া যায় । ১৮৯৫ খ্ৰীষ্টাব্দে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে পড়িয়া, যখন মুর্শিদাবাদ জেলার কয়েকটা স্থান হাহাকার করিতেছিল, তখন ইনি প্রথমে মহুলা নামক গ্রামে, পরে সারগাছিতে স্থিত হইয়। এই দরিদ্রনারায়ণ জনসঙ্ঘের সেবায় আত্মোৎসর্গ করেন। । পরে সারগাছিতে একটা স্থায়ী আশ্রম ও কলাশিল্প বিদ্যালয় স্থাপন করিয়া, স্থানীয় সহায় সম্বলহীন দরিদ্র নারায়ণগণের স্থায়ী কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত হইলেন । স্বামী অখণ্ডানন্দ জ্ঞানী, পণ্ডিত, ত্যাগী এবং আড়ম্বরঙ্গীন উচ্চস্তরের সাধু ছিলেন । তিনি মান, যশোলিপসাধু কখনও অভিভূত হন নাই । কিন্তু তিনি বহুলোকসঙ্গ ও বহুলোকের সহিত নানারূপ আলাপ করিয়৷ সময় ব্যয় করিতে ভালবাসিতেন না । নিঃসঙ্গ অবস্থায় বা অল্পলোকের সহিত আলাপ আলোচনায় তাহার জীবন ব্যয়িত হইয়াছে রামকৃষ্ণের প্রধান সপ্তদশ জন সন্ন্যাসী শিষ্যের মধ্যে তিনি অন্যতম । স্বামী শিবানন্দ মহারাজের মহাপ্রয়াণের পর, ইনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ নিৰ্ব্বাচিত হইয়া, প্রায় তিন বৎসর কাল জীবিত ছিলেন । ১৩৪৩ সালের ২৫শে মাঘ রবিবার তিনি ৭২ পৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন ।