পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গানই আমার মুখে শুনিয়ে দিলুম। তাঁরা অবাক হলেন, নিজেরা খ্রীস্টান, তাই ইংরেজী গান ছাড়া নিজের দেশের গান তাঁরা গান না। আমার ‘রি—রি—রি—রি’র আবৃত্তিতে বিশেষ আমোদ পেলেন, বললেন মাদ্রাজী সঙ্গীতের চেহারাটি একেবারে ঠিকঠাক ধরে ফেলেছি। যেমন ইতিপূর্বে বাঙাল মাঝিদের গানে “মনমাঝি সামাল সামাল ডুবল তরী ভবনদীর তুফান ভারি—ই—ই মনমাঝি"তে ‘ই’র টান ধরায় তাদের গানের চেহারা ফুটেছিল। এই আমার দক্ষিণী গান সঞ্চয়ের সূত্রপাত। রজনীবাবুর কন্যারাও গান করতেন—বিশেষত বড়মেয়েটি—সুকুমারী সুগায়িকা, কিন্তু আমার মত বাতিকগ্রস্ত ত নয়। নাহলে কয়েক বৎসর মাদ্রাজে থাকতে কত মাদ্রাজী সর পুঁজি করে বাঙলাদেশে আনতে পারতেন। তা করেননি তাঁরা—বাঙালীসুলভ অন্য জাতির প্রতি ঘৃণাবশত তাদের সঙ্গীতে কোন চমৎকারিতা পান না, যা পান শুধু, একটা হাসিকৌতুকের অবসর।

 মাদ্রাজ থেকে আমরা মহীশুরে গেলুম। সেখানে ডাক্তার রামস্বামী আয়েঙ্গারের মাতুল দরবার বক্সী। তিনিই আমাদের অভ্যর্থনার সব আয়োজন করেছেন। আমরা সেখানে রাজ-অতিথি। মহীশূরে পদার্পণ করে দেখলুম একেবারে সঙ্গীতের রাজ্যে প্রবেশ করেছি। সারাদিনরাত্রি বায়ুতরঙ্গে সঙ্গীত ভেসে আসছে। উত্তর ভারতের সঙ্গীতের মত নয়, দক্ষিণের একটি নিজস্ব অপূর্বতাসম্পন্ন। ‘মহারাণী গার্লস স্কুল’ দেখতে গেলুম। সেখানে দেওয়ানের পৌত্রীর তরঙ্গায়িত কণ্ঠে ত্যাগরাজ নামে প্রসিদ্ধ তেলেগু কবির রচিত অনেকগুলি ওদেশী ক্লাসিকাল গান শুনে মুগ্ধ হলুম এবং মেয়েটিকে বাড়িতে আনিয়ে তার কাছ থেকে সেগুলি আদায় করলুম। দেশে ফিরে রবিমামাকে উপঢৌকন দিলুম। তিনি তাদের ভেঙে ভেঙে ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করলেন—বাঙলার সুররাজ্য বিস্তৃত হল। ইতিপূর্বে গুজরাট থেকে তাঁদের নিজে সংগীত গুজরাটি ভজনের কথা ও সুর এবং শিখগুরুদের পঞ্জাবী গীতের ভাব ভাষা ও সুর নিয়ে মাতুলেরা আগেই বাঙলা সঙ্গীতের ভাণ্ডারে প্রাচুর্য এনেছিলেন। নারীনাং মাতুলক্রমঃ। আমি তাঁদেরই গতানুগতিক হয়েছিলুম।

৯০