পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার জন্যেও টিকিট নেওয়া হল। আমার কাপড়-চোপড় পরের ট্রেনে পাঠানর বন্দোবস্ত হল। আমি চল্লম তাঁদের সঙ্গে। সেই প্রথম কলকাতা থেকে দুরে বাঙলার অভ্যন্তরে যাওয়া আমার।

 সেদিন কেঁদে আমি জিতে গেলুম।

 কিন্তু ঐ বয়সে কান্নাটা আমার স্বভাবসিদ্ধ ছিল না—হাসিটাই আমার প্রকৃতিগত ছিল। কথায় কথায় কারণে অকারণে আমার হাসি পেত। ক্লাসে বসে প্রোফেসারের কাছে পড়ছি, হঠাৎ দক্ষিণের বারান্দার কার্নিসে বসে কাক কা কা করে ডেকে উঠলে হাসি সামলাতে পারতুম না। সর্বদা হাসিখুশির ও গল্প জমান স্বভাবের দরুনই বোধ হয় আমি স্কুলে ছোট-বড় সকলের লোকপ্রিয় ও বন্ধু ছিলুম।

 রাজশাহীতে স্যার তারকনাথ পালিতের পুত্র সিভিলিয়ান লোকেন পালিত এ্যাসিস্ট্যাণ্ট ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের পারিবারিক বন্ধুত্ব। আমরা গিয়ে অবধি দিদির বাড়িতে তাঁর প্রায় সারাদিন কাটত। একবার করে কোর্টে যাওয়া ছাড়া। তাঁর পিতার মত তিনিও ভারী গল্পুড়ে ছিলেন, আর কি চিত্তহারক সব গল্প করতেন তাঁর কেম্ব্রিজের বন্ধুদের। তাঁর এক একজন বন্ধু নাম ধাম গণ ও কর্মে আমাদের এত পরিচিত হয়ে পড়েছিলেন ঠিক যেন আমাদেরই ব্যক্তিগত বন্ধু। লোকেন ছিলেন অত্যন্ত 'intellectual', ইংরেজী কাব্য ও সাহিত্যে গভীরভাবে প্রবিষ্ট, তাঁর সঙ্গে নানা কথার আলোচনায় সুখ ছিল। তিনি বললেন একদিন—“এত যে ভাব ছিল আমার ইংরেজ ও স্কচ সহপাঠীদের সঙ্গে নিজেদের মধ্যে কোন পার্থক্য বোধই আসত না—তবু যেদিন একদিন তাঁদের গান শুনলুম,

Rule Britannia! Britannia rules the waves!
Britons never shall be slaves.

—সেদিন অন্তরের গভীরতম স্তর থেকে অনুভব করলুম—আমি কত দূরে ওদের থেকে, কত পর ওদের।”

 সাহিত্যিক বা রাজনৈতিক আলোচনায়, আহারে-বিহারে, আমোদ-প্রমোদে সবতাতেই লোকেন আমাদের সঙ্গী ছিলেন। একবার দিদিকে ও আমাকে ইংরেজীতে একটি প্রবন্ধ রচনার প্রতিযোগিতা দিলেন, “Love & Friendship."-আমি যা লিখেছিলাম, তার একটা সেণ্টেন্স আমার মনে পড়ে -"Friendship is love without its wings"- নিশ্চয়ই কোন ইংরেজ লেখকের লেখা থেকে ভাবটা পাওয়া-নয়ত এ বিষয়ে

৯৬