পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হাসি দিয়ে বঞ্চিত করার স্বভাব আমার রয়ে গেল; গভীর রাজনৈতিক বিপদের দিনেও মহাত্মা গান্ধী তাই একবার বলেছিলেন আমায়-"Your laughter is a national asset! Laugh away!” জীবনে কাঁদিনি তা নয়,— সে লুটোপুটি খেয়ে অন্তরের অন্তঃপুরে অনেকবার — লোকের সামনে নয়। বৌদ্ধ ত্রিপিটকে একটা গল্পে আছে, একজন বোধিসত্ত্ব বলছেন—“জনমে জনমে যত কান্না কেঁদেছি, তাতে অনেকানেক অশ্রুর সমুদ্র রচিত হয়েছে।” আমাদেরও একটা জন্মেরই কান্না জড় করলেও তাই হয়।


॥ চৌদ্দ॥
নানা কথা—নানা লোক
জীবনের মোড়ফেরা

বলেছি কাশিয়াবাগান আমাদের বহ, আত্মীয় সমাগমের একটা আড্ডা ছিল। যোড়াসাঁকোর সবাই প্রায় আসতেন। আত্মীয় ছাড়া কুটম্বদেরও নিত্য আগমন ছিল। মোহিনীবাবুর চারটি ভাই আপনার লোকেরই মত আনাগোনা করতেন। তার মধ্যে তাঁর দ্বিতীয় ভ্রাতা রমণীবাবুর সঙ্গে সরোজদিদির ছোট বোন ঊষাদিদির বিয়ে হয়ে গেল। রমণীবাবু আত্মীয়শ্রেণীভুক্তই হয়ে গেলেন এবং আজীবন আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কবান রইলেন। মোহিনীবাবু, যখন বিলাত প্রবাসে, রমণীবাবুই তখন তাদের বহৎ পরিবারটি পালন করতেন। আমার বাবা-মশায়ের সাহায্যে তিনি মিউনিসিপ্যাল কমিটিতে একটি বড় চাকরি পেলেন। তাঁদের চতুর্থ ভ্রাতা রজনীর আবিবাহ কাশিয়াবাগানে আনাগোনা ছিল। তখন তার ছাত্রজীবন। পড়াশুনায় খুব ভাল ছিল—আর আমাদের নানা বই থেকে মুখে মুখে গল্প শোনাত। আইভানহোর গল্প বোধহয় প্রথম তার কাছে শুনি, পুকুরে একটু একটু সাঁতার দিতে সে-ই শেখায়। আমি তখন ছোটর দলে, তার বেশি ভাব ছিল দিদির সঙ্গে। কলেজে পড়তে পড়তেই বোধহয় তার গগনদাদাদের ছোট বোন সুনয়নীর সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ হল। কাশিয়াবাগানে আনাগোনা কমে এল। যে রাত্রে তার

৯৮