পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জীবনের শেষভাগে আমার মায়ের সাহায্যে বিলেত গিয়ে ব্যারিস্টার হয়ে এসেছিল। একটা কোন আশা নিয়ে গিয়েছিল। সে আশা পূর্ণ হবার নয় তাও জেনেছিল সেখানে থাকতে থাকতেই। ব্যারিস্টার হয়ে হাইকোর্টে যাতায়াত করত; কিন্তু জীবিকা অর্জন তার ব্রিজ খেলার জিতের উপরই বাঁধা ছিল। বিলেত থেকে ফেরবার আগে সকলের অগোচরে এক মেমকে বিয়ে করে তাকে ও একটি কন্যাকে রেখে এসেছিল, নিজের রোজগারে তাদের পালন পোষণ করত, সে বিষয়ে কর্তব্যশীল ছিল, কেবল স্বভাব-সুলভ মৌনবৃত্তি অবলম্বন করে পাঁচজনকে জানায়নি। অনেক পরে মায়ের মৃত্যুর পর এক ডাগর কন্যা যখন জাহাজে করে কলকাতায় উত্তীর্ণ হয়ে, মোহিনীবাবুদের গৃহে উপস্থিত হল, তখন সকলে জানতে পারলে। মেয়েটি খুব ভাল, এখন লেডি ডাক্তার। আর একজনকে মনে পড়ে, সে-ও আপন লোকের মত অকাতরে আসা-যাওয়া করত। সে হচ্ছে অবিনাশ চক্রবতী-কবি বেহারী চক্রবর্তীর অতি আদরের বড় ছেলে। তার উপর বেহারীবাবুর একটি কবিতা ছিল-“বাছনি আমার”—তাই দিয়ে সে সকলের পরিচিত। ভারি সরল, ভারি সাদাসিধে ও ভারি সঙ্গীত-প্রিয় ও সঙ্গীতের রসজ্ঞ সে। আমি একদিন একলা বসে বসে আপন মনে পিয়ানোতে বিথোভনের প্রসিদ্ধ ক্লাসিকাল রচনা “Moon-light Sonata” বাজাচ্ছিলাম। সে পাশের ঘরে বসে চুপ করে শুনছিল। আমার বাজনা শেষ হয়ে গেলে আমার কাছে এসে বল্লে-"মরি! মরি! কি সুন্দর।” তার পরদিন আমার উপর একটি কবিতা লিখে নিয়ে এসে আমায় উপহার দিলে—“প্রাণের বোনটি আমার সরলা সুন্দরী।” তার আসা-যাওয়া ক্রমে কমে এল, একেবারে বন্ধ হল। শেষে নাকি সে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল।

 কাশিয়াবাগানে আর এক পরিবারের নতুন করে যাতায়াত আরম্ভ হল —সে আশু চৌধুরী ও তাঁর অনুজদের। এদের ভিতর আর এক রকমের চটক ছিল সেকালের “আধুনিকতা”। যত না পাবনাই এরা, তারচেয়ে বেশী কৃষ্ণনাগরিক। এদের বাঙ্গলা উচ্চারণে সেই মনোমোহন-লালমোহন-ঘোষীয়তা, ঐ দুই ভাইয়ের মতই এদেরও বচনপ্রাচুর্য। এঁদের মনস্তত্ত্ব অনেক নতুন ভাবের রাজ্যে ঘোরাফেরার গাঁথুনির উপর দাঁড়ান। সব ভাইদের মধ্যে আশবাবুই সবচেয়ে চটকদার। তাঁর ভিতর এমন একটি মোহিনী ছিল, যাতে সবাইকে বশ করতেন। তাঁদের সেজভাই কুমুদবাবুরও সেটা কতক কতক ছিল।

১০০