পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



পনর

মহীশূর

মহীশূর বাসে যে ভারত আমার হৃদয়ে প্রতিভাত হল সে এক অপূর্ব নূতন। “একালে সেকাল” নাম দিয়ে তার ছবি এঁকেছিলুম তখন ‘ভারতী’তে। এ যুগের ভারত নয় যেন সে, সেই সংস্কৃত নাটক ও কাব্যের যুগের।

 মহারাণী গার্লস স্কুলের সঙ্গীতাচার্যের কাছে আমি নিজেই বীণা শেখার প্রার্থী হলুম। এমন সুযোগ কি ছাড়তে পারি? প্রথমদিন যখন তাঁর কাছে গেলুম—দেখলুম মাটিতে বড় মাদুর বিছান রয়েছে, তার একধারে তিনি বসে আছেন, একধারে আমার জন্যে জায়গা খালি রয়েছে—মাঝখানে দুটি রুদ্রবীণা। একটি হাতে তুলে নিয়ে—হিন্দী ইংরেজী অনভিজ্ঞ আচার্য সংস্কৃতে “তত্র ভবতি” বলে আমায় অভিবাদন করে বল্লেন—“তন্ত্রী-ত্রুটিতা।” চমকে গেলুম। কালযন্ত্র কি চার-পাঁচশত বছর পিছিয়ে গেছে? আমি কি সংস্কৃত সাহিত্য কাব্য থেকে বেরিয়ে আসা একটি নায়িকা? আমার আশেপাশে সব মেয়েদের বেণীতে কুন্তলে ফুল জড়ান, সুগন্ধি দ্রব্য দিয়ে মাথা ঘষে একটা হালকা যন্ত্রে অল্প অগ্নি রেখে যন্ত্রটি হাতে করে চুলের ভিতর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চুল শুকন—এ সবে কি মেঘদূতের এক একটি বর্ণনা চোখের উপর ভেসে উঠল না? এমন আরও কত কি! যাঁরা কবি কালিদাসকে বাঙালী বলে দাবী করতে চান দক্ষিণ ভারত অঞ্চলে আজ পর্যন্ত প্রবহমান অনেক কিছু আচার ও রীতি দেখে আমার ত মনে হল না তাঁদের দাবী সমূলক। বাঙালীর লোভটা বড় বেশী! কাজ কি আমাদের টানাবোনা করে, নানা কুতর্কে কষ্টপ্রমাণে প্রমাণিত করার চেষ্টায় যে কালিদাস বা ভবভূতি—সবাই বাঙালীর পূর্বপুরুষ—ভারতের অন্য প্রদেশবাসীর নয়? কবি জয়দেবের মত অত বড় ভারতবিশ্রুত কবি থাকতে আমরা আরো কাউকে আমাদের বংশাবলীভুক্ত করতে কেন লালায়িত হব? এ যেন প্রসন্নকুমার ঠাকুরের চেষ্টারই সমতুল্য প্রয়াস যে, শাণ্ডিল্য গোত্রের কবি ভট্টনারায়ণ কেবল শাণ্ডিল্য ‘ঠাকুর’দেরই পূর্বপুরুষ—সারা বঙ্গদেশব্যাপী শাণ্ডিল্য গোত্রের বন্দ্যোপাধ্যায় মাত্রের নয়? আশা করি এমন একদিন আসবে না যেদিন বাঙালী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথে সন্তুষ্ট

১০৯