পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিবাহিত মেয়ে, কেউ বা অনেক ছেলের মা। সকালে মেয়েরা প্রায়ই বাসী সূতির ছাপান কাপড়ে আসে। দুপরে বাড়ি ফিরে স্নানাদি করে শুচি হয়ে মৈসোরি সুন্দর সুন্দর পাকা রঙের রেশমী কাপড় পরে আসে। যাই পরুক একটা পারিপাট্য, একটা সহজ সৌষ্ঠবে ভরা। কোমরে সকলেরই প্রায় শাড়ির উপর একটা রূপার ঘুঙ্গুরদার বেল্ট। কারো কারো সেটা খাঁটি সোনার। গায়ে খুব বেশী গয়না নয় -নাকে কানে হীরা বা মুক্তার ফুল ও নাকছাবি, হাতে দু-একগাছি চুড়ি। সোনা মোতি হীরের চুড়ি হোক আর না হোক সধবাদের হাতে কাঁচের চুড়ি থাকতেই হবে—আমাদের নোয়ার মত—সেইটিই তাদের সধবাত্বের লক্ষণ। বিধবারা কাঁচের চুড়ি পরে না, সোনার পরতে পারে। শ্রেণীবিশেষে কিছু কিছু পার্থক্যও দেখা যায়। পূজাপার্বণের দিন মন্দিরে গিয়ে পূজা দেওয়া ও দেবতা দর্শন মেয়েদের নিয়মিত কাজ। রাস্তায় মেয়েদের হাঁটা, চলাফেরা অন্যান্য দৈনিক দৃশ্যের একটি অন্যতম। কোন পথেচলা মেয়ের প্রতি কোন পথেচলা পুরুষের বাঁকা দৃষ্টি নেই। যা নিত্যনৈমিত্তিক সাধারণ ঘটনা, সেটা অসাধারণ শূন্যতায় কোন পুরুষ বা বালকের ঠাট্টা-বিদ্রুপ বা টিটকারির কারণ হয় না। এদের বার মাসে হিন্দুর তের পাবণ ত বাঁধা আছেই—উপরন্তু সম্প্রদায়-বিশেষের অতিরিক্ত বিশেষ পর্বদিনও আছে। এই পর্বগুলি ভারতবর্ষকে কেমন একসূত্রে গেঁথে রেখেছে সেইটে লক্ষ্য করলুম।

 বাঙলার গৃহে গৃহে যেদিন বোনেরা ভাইদের কল্যাণ কামনায় ভাই দ্বিতীয়া করে—এখানেও সেদিন সেই উৎসবের আনন্দ। ঘরে ঘরে বিশেষ পক্কান্ন প্রস্তুত হচ্ছে, ঘরে ঘরে ভাইরা বোনদের আশীর্বাদী বা প্রণামী দিচ্ছে, ঘরে ঘরে এক মা-বাপের সন্তানদের—পুত্র ও কন্যার জন্মগত ঐক্যবন্ধনে আর একটি করে গাঁট বাঁধা হচ্ছে। নব্যসভ্যতার যুগে খ্রীস্টান জগতের অনুকরণে ভারতবর্ষের এই সকল পারিবারিক প্রীতিবর্ধক উৎসবগুলি অনেক পরিবার থেকে উঠে যাচ্ছে। আমাদের কালেও দেখছি কোন কোন স্থলে এটা একটা লেনদেনের মধ্যে গণ্য হয়ে হিসেব খতিয়ে দেনাপাওনা মেটান হয়, বোনের বাড়ি গিয়ে তার স্নেহমাখা অন্ন ও বস্ত্র গ্রহণ না করেই তাকে হিসেব কাটাকাটি করে টাকা ধরে দেওয়া হয়। হায় এ কালের অভাগ্য ভাই ও অভাগিনী বোন। যে নিঃস্বার্থ নিগূঢ় নির্মল ভালবাসার দুটি স্রোত হৃদয়ে সারা বছর সঞ্চিত মালিন্যের মাটি খুঁড়ে দুদিক দিয়ে বের হয়ে বিশুদ্ধ মিলন চাইছিল—বছরের একটি

১১৩