পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আর আমাদের বিজয়াদশমী দিনের মত এটি আত্মীয়-বন্ধুদের পরস্পরের মনোমালিন্য মুছে ফেলে সৌহার্দ্যে পুনর্মিলনের দিন। আরও একটি অনুষ্ঠানে সেদিনটি সকলের বুক ভরে দেয়—লক্ষ্মীর পূজায়। দেওয়ালীতে জুয়াখেলা স্বগহে লক্ষ্মীর আবাহনেরই প্রকারান্তর। প্রতি গৃহটি সেদিন খোলার ঘর হোক বা অট্টালিকা হোক নিকিয়ে সারাদিন ধরে সারা বছরের সঞ্চিত আবর্জনা সাফ করে, আলপনায় গহখানি সুচিত্রিত করে, রাত্রে লক্ষ্মীর শুভাগমনের জন্যে প্রস্তুত রাখা হয়। একে বলে “দেওয়ালী কি সফাই।” ইংরাজদের ‘Spring cleaning’-এর আর এক রূপ। একজনের কাছে গল্প শুনলুম, সে বছর এক বর্ধিষ্ণু গ্রামে এই রকম ঘরে ঘরে দেওয়ালিকি সফাই হয়েছে। এক গরীব ব্রাহ্মণ ও তার ব্রাহ্মণী দুজনে অতি ভক্তিভরে গোবর দিয়ে তাদের ঘরখানি নিকিয়ে উঠানের জঞ্জাল পরিষ্কার করে লক্ষ্মীর প্রতীক্ষায় জেগে বসে আছে। সে গ্রামখানির ছোট-বড় প্রতি ঘরে ঘরে এইরূপ জাগরণ চলেছে। এদিকে লক্ষ্মীঠাকরুণ তাঁর ঝাঁপি হাতে করে চুপি চুপি এসে প্রতি ঘরের জানলা দিয়ে ভিতরে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখছেন। কোনটিই তাঁর পছন্দ হচ্ছে না। অবশেষে সেই গ্রামের ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের খানার ঘরের টেবিলের প্রতি তাঁর দৃষ্টি পড়ল। কি শুভ্র শ্বেত চাদরখানি বিছান মেজে, কি ঝকঝকে কাঁচের গেলাসে ও রূপার কাঁটা চামচেতে সাজান ভোজন স্থান, কি সুন্দর আলোতে ও ফুলেতে সুশোভিত। দেখে দেখে মুগ্ধ হয়ে লক্ষ্মী সে রাত্রি সাহেবের সেই ভোজন-মন্দিরে ঢুকে সেইখানেই বসে পড়লেন। গরীব ব্রাহ্মণদের গোবর নিকিয়ে লক্ষ্মীর আশাপথ চেয়ে চেয়েই রাত্রি কাটল।

 পঞ্জাবে দেখেছি দেওয়ালীতে লক্ষীপূজার সময় কোন কোন গৃহে পুরোহিতের সাহায্য ব্যতিরেকে গৃহস্বামী ও গৃহিণী নিজেরাই পূজা নির্বাহ করেন। যেখানে স্ত্রী নিজেই পুরোহিত, সেখানে পূজার পদ্ধতিটিও মেয়েলী, সহজ, সাদাসিদে। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা বড় বড় সংস্কৃত মন্ত্রে যা বলেন মাতৃভাষায় তারই সরল ভাষান্তর। একবার একটি পরিবারে বসে দম্পতির দুজনে মিলে পূজা করা দেখেছিলুম। তাঁদের দুজনের আসনের সামনে লক্ষ্মীর একটি প্রতিমা অর্থাৎ মাটির একটি ছোট পুতুল, তাঁর আশেপাশে অন্যান্য নানা পতুল নানা দেবদেবীর মূর্তি—যা দেওয়ালীর বাজারে পাওয়া যায়, বাড়ি বাড়িতে সবাই কিনে রাখে। মাটির এক পঞ্চপ্রদীপ—তাতে তেল সলতে দিয়ে আলো

১১৫