পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শিখতেন, যদিও তিনি অনেক আগে থেকেই সোলাপুরে একজন সাহেবের কাছেই আরম্ভ করেছিলেন। সে য়ুরোপীয় বেহালা বাজানর ধরনে ও মহীশূরী বেহালা বাজানর ধরনে অনেক তফাৎ। য়ুরোপীয় বেহালায় হাত পাকতে সারাটা জীবন যায়। বেহালা যার অঙ্গের অঙ্গী না হয়, চারটে তারের উপর ছড়ি বুলিয়ে বেহালার কাঠখানার থেকে সঙ্গীতের দেবদেবীদের বাইরে বের করে আনা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। কাটাছাঁটা ঠিক ঠিক স্বর বের করা যেতে পারে; কিন্তু প্রাণ থাকে তার বহু দূরে। কিন্তু মহীশূরী বেহালায় চারটি তারের স্বরগ্রাম সাজানর প্রভেদেই দেখলুম বাজনায় প্রাণ ফোটানতে সহজসাধ্যতা এসে পড়ে। আর মীড়ে মীড়ে হাত উঁচু-নীচু সরানতেই আমাদের রাগরাগিণীর রূপ একেবারে ফুটে ওঠে—বিলিতি ধরনে বাজানতে তাদের অঙ্গলাবণ্য যেন বিদেশী পোশাকে ঢাকা পড়ে থাকে। এদেশে এ যন্ত্রকে বেহালা বা violin বলে না, fiddle বলে। বোধহয় পর্তুগীজদের কাছে দক্ষিণীরা এ যন্ত্রটি প্রথম বাজাতে শিখে নিজেদের প্রয়োজনমত তারবাঁধার রকমটি বদলে নিয়েছে ও বীণার তারের মত এতে মীড় ফুটিয়েছে। এখানে মেয়েদের হাতে যখন বেহালা শুনতে থাকলুম একটা ব্যথা বাজতে লাগল কোথায়! এদেশের রুদ্রবীণায় পেলুম গাম্ভীর্য, বেহালায় পেলুম সকরুণতা।

 মেয়েরা আমার সঙ্গে কোন্‌ ভাষায় কথা কইত? ইংরেজীতে—আমি তেলেগু জানিনে, তারা হিন্দি জানে না। তাদের অবাধ ইংরেজী কথোপকথনও একটা বিস্ময় আনলে। শুনেছিলুম মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে সকলেই প্রায় ইংরেজী বলে—সে ছোটলোকী ইংরেজী—নাম তার ‘পিজিন ইংলিশ’। এদের শিক্ষিত ইংরেজী। কিন্তু এরই ভিতর মাঝে মাঝে হাস্যরসের সৃষ্টি হত। একদিন আমায় একটি স্কুলের মেয়ে জিজ্ঞেস করলে—আমায় যে uncle পৌঁছতে এসেছিলেন, তিনি matricide না patricide?

১১৮