পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 মহীশূরে আমার আসল বন্ধুত্ব হল এখানকার ডিরেক্টর অব পাব্লিক ইন্সট্রাকশন মিস্টার ভাভার পত্নী ও মেয়ের সঙ্গে। ভাভারা পার্শি। তাঁদের মেয়েটি—মেহেরবাঈ পরমা সুন্দরী ও সুশিক্ষিতা। বম্বে-পুণা-সাতারায়ও পার্শিদের সঙ্গে আমাদের পরিবারের মেয়েদের সহজেই খাপ খেয়ে যেত—মেজমামী ও মার অনেক পার্শি বান্ধবী হয়েছিলেন। আমারও এঁদের সঙ্গে মিল হয়ে গেল খুব। মেহেরবাঈকে দেখে আমি মধ্যে মধ্যে আশ্চর্য হতুম—বম্বের মত বৃহৎ শহরের বাইরে, পার্শি-অপ্রতুল মহীশূরের নিভৃত বনে তাঁদের অজ্ঞাতে এমন ফুলটি ফুটে আছে—কোন পার্শি দুষ্মন্ত এসে এই শকুন্তলাটিকে দেখবে কি একদিন? তাই হল। রূপকথার Prince Charming এল একদিন।

 স্যার জামশেদজী টাটার জ্যেষ্ঠপুত্র দোরাব টাটা পার্শি সমাজে একটি মস্ত বড় রুইকাৎলা জাতীয় পাত্র। স্ব স্ব মেয়ের হিতকল্পে বম্বের বড় বড় পার্শি ক্রোড়পতির পত্নীরা তাঁকে ধরার জন্যে অনেকদিন ধরে জাল পেতে আছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি ধরা দেননি। বয়স হয়ে যাচ্ছে, হবু শাশুড়ীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এমন সময় নিয়তি নিজের হাত খেললে। টাটা স্কীমের কার্য উপলক্ষে বৃদ্ধ পিতা জামশেদজীকে দিয়ে দোরাবকে মহীশূরে পাঠালে। সেখানে মেহেরবাঈকে দেখে দোরাবজী প্রেমপাশে ধরা পড়ে গেলেন। এ মায়েদের হাতেফেলা ছিপ নয়—একেবারে বিধির নিয়ন্ত্রণে ছোঁড়া কন্দর্পের পঞ্চবাণ। মেয়ের বাপ-মার মনে একটা বাধা খট্‌কা দিলে—দুজনের বয়সের অনেক পার্থক্য। কিন্তু প্রেমপথে সে বাধা টিকল না। শীঘ্রই তাদের engagement হল। সে সম্বাদ বম্বেতে যখন প্রচার হল, মহীশূরের মত অজানা শহরে অজ্ঞাতকুলশীলের কন্যার প্রতি দোরাবজীর অনুরাগের কথা বম্বের মায়েরা যখন শুনলেন তাঁর মনোনয়নকে ধিক্কার দিতে লাগলেন। তাতে তাঁদের বিবাহ বন্ধ হল না। শুভদিনের শুভক্ষণে মহীশূরে মেহেরবাঈয়ের পাণিগ্রহণ করে তিনি পত্নীসহ যখন বম্বেতে এলেন এবং অচিরে “স্যার দোরাব” হলেন, তখন বম্বের পার্শিসমাজ লেডি দোরাব টাটাকে তাঁদের একজন মূখ্যা বলে গ্রহণ করতে বাধ্য হল।

 যে সময় মেহেরার engagement হয়, আমি মহীশূরে ছিলুম না। তার চিঠিতে খবর পেলুম। দোরাবজীর মহীশূরে আসা ও তাঁদের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনায় ভরা সে বিশ পৃষ্ঠার চিঠিখানা একটি ষোড়শী বালিকার প্রথম প্রণয়োল্লসিত হৃদয়ের মুক্ত

১২০