পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পূজার আয়োজন করেছে—এক হিন্দুস্থানী রাজা খুশী হয়ে সেজন্যে নিজের তলোয়ার তাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। আজ আপনি তাদের এ-পূজা যদি বন্ধ করেন, সংবাদপত্রের সূত্রে সমস্ত ভারতবর্ষে ঢিঢি পড়ে যাবে। সবাই বললে বাঙালী যুবকেরা খড়্গপূজা করতে চেয়েছিল, একজন নেতৃস্থানীয় বাঙালী বৃদ্ধ হিন্দু তাতে বাধা দিয়েছেন, তাঁর অতিমাত্রার রাজভক্তি তাতে রাজদ্রোহিতার গন্ধ পেয়ে থরহরি কম্পমান হয়েছে, তাঁর তথাকথিত হিন্দুত্বের পরীক্ষায় আজ তিনি সম্পূর্ণভাবে fail করেছেন। এই ত একদিকে দেশের লোকের ধিক্কার—আর একদিকে মামলায় ফেঁসে যাবেন। আপনি উদয়াদিত্য-উৎসব হবে জেনে-শুনে আজ চারদিন থেকে টাকা গ্রহণ করে Albert Hall ভাড়া দিয়েছেন। টাকা এখনও ফেরাননি। এ অবস্থায় হঠাৎ শেষ মুহূর্তে ছেলেদের উৎসব বন্ধ করলে তারা আপনার নামে ক্ষতিপূরণের মকদ্দমা আনতে পারে। আইনতঃ আপনি দায়ী। অতএব সব দিক থেকেই আপনার পক্ষে বিজ্ঞোচিত কাজ হবে ছেলেদের উৎসব এখানে হতে দেওয়া।”

 বৃদ্ধ আমার চিঠি পেয়ে লিখলেন—“তবে তাই হোক। ছেলেরা উৎসব করুক। কিন্তু এর জন্যে সব দায়িত্ব আপনার।” নিজের স্কন্ধের দৌর্বল্য স্বীকার করে তাঁর কন্যাসমা দেশের এক বালিকার স্কন্ধে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে বৃদ্ধ হাত ধুয়ে বসলেন। ইতিমধ্যে আমার কাছে খবর এসে গেছে যে, শ্রীশবাবু দ্বিগুণ টাকা স্বীকার করে হ্যারিসন রোড়ের উপর এলবার্ট হলের অতি সন্নিকটেই এলফ্রেড থিয়েটারের স্টেজ ভাড়া নিয়েছেন। আমার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে গেল তাঁর দূত এসে। থিয়েটারের মাড়োয়ারী স্বত্বাধিকারীকে তাঁরা খুলে বলেছিলেন—“আমরা তলোয়ার পূজা করব জেনে রেখো।” মাড়োয়ারী বললে—“আপনারা পূজা করেন, নাচেন, কুঁদেন সে আপনারা জানেন। আমার কি? আমার ভাড়া পাওয়া নিয়ে কথা, সেটা হাতে হাতে পেলেই হল।” হাতে হাতেই পেলে। তারপর শ্রীশবাবুর কাছে যখন নরেন সেনের স্বীকৃতি পত্র পাঠালুম তখন আর তাঁরা এলবার্ট হলে ফিরে যেতে রাজী হলেন না। সভা এলফ্রেড থিয়েটারেই হল। এলবার্ট হলের সামনে ভলাণ্টিয়ার রেখে দেওয়া হল—হ্যাণ্ডবিল অনুসারে সেখানে যেমন যেমন লোক সমাগত হয় তাদের এলফ্রেড থিয়েটারে পাঠান হয়।

 উদয়াদিত্যের উদ্বোধন প্রথমে কৃত হল প্রেসিডেণ্টের দ্বারা আমার পাঠান লেখা পড়ে, আমি নিজে যাইনি। তারপর ক্ষীরোদবাবুর

১৩১