পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অভিভাষণ হল, সব শেষে তলোয়ারের সম্মুখে পুষ্পাঞ্জলি। ক্ষীরোদবাবুর অভিভাষণের সারমর্ম ছিল—মৎস্য পুরাণের সেই কাহিনী যাতে ঋষির হাতে আসা একটি ক্ষুদ্র কূপের মীনকে ঋষি এক সরোবরে ফেলে দিতে তার সরোবরব্যাপী বহৎ কায়া হল। সেখান থেকে তুলে সমুদ্রে ফেলতে তার কায়া বর্ধিত হতে হতে সে অনন্তব্যাপী হল। তখন ঋষির হাতে পড়া ক্ষুদ্র কূপের সেই ছোট্ট মৎস্যটি বলেন—“আমায় দেখ, আমি অনন্ত।” ক্ষীরোদবাবু ভবিষ্যতে দৃষ্টি বিস্তার করে বললেন—আজকের এই ক্ষুদ্র উৎসবের পরিকল্পনারূপী মৎস্যটি একদিন সমগ্র বাঙালী জাতির মধ্যে কায়াবিস্তার করে বাঙালীকে বীরত্বে বিপুল করে পরিদৃশ্যমান হবে।” তাঁর সে ভবিষ্যৎ দৃষ্টি সত্য হয়েছে কি না, আমার সাধনা সিদ্ধ হয়েছে কি না দেশ তার পরিচয় পেয়েছে।

 বাঙলার বাইরে এক বছর থেকে মহারাষ্ট্রীয় ও দাক্ষিণাত্যের লোকেদের সংস্পর্শে এসে আমার স্বদেশপ্রীতির পরিধিটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল। শঙ্করাচার্য যে ভারতবর্ষকে উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম এই চতুর্দিকে চারটি ধামের বা তীর্থক্ষেত্রের বন্ধনীতে ঐক্যডোরে বেঁধেছিলেন সেই ভারতবর্ষ আমার বুকে আধিপত্য স্থাপন করেছিল। সেই সমগ্র ভারতের উপলব্ধিময় হয়েছিলুম—বঙ্গ যার পূর্ব প্রান্ত। বাঙলাকে বাকী প্রান্তগুলির সঙ্গে সমান লাইনে মাথা খাড়া করে দাঁড় করাতে হবে বটে, কিন্তু বাকী প্রান্তগুলিকে ভুললে চলবে না। তাই ওয়াচার প্রেসিডেণ্টশিপে সেবার বিডন স্ট্রীটে যখন কংগ্রেস বসল তাতে গাওয়ার জন্যে আমার সমস্ত সত্তা মন্থন করে গান বেরল—

অতীত গৌরব বাহিনী মম বাণী
গাও আজি হিন্দুস্থান!

এর নতুনত্ব সকলেরই হৃদয়স্পর্শী হল। রবীন্দ্রনাথ নিজে এর সমজদার হয়ে গাওয়ানর ভার নিলেন। সেবার কংগ্রেসে পাণ্ডালের বাইরে ও ভিতরে সবসুদ্ধ তিনশ ভলাণ্টিয়ার ছিল। সুরেন বাঁড়ুয্যের বক্তৃতা যেদিন বিকেলে হবে সেদিন পাণ্ডালের বাইরের ভলণ্টিয়াররা তাদের পোস্ট ছেড়ে নিয়ম ও শাসন ভঙ্গ করে সুরেন বাঁড়ুয্যের বাগ্মিতার ধারা শোনার আগ্রহে ভিতরে হুড়মুড় করে ঢুকে visitors' seats দখল করে বসে পড়ল। দিবাবসানে ভূপেন বোস তাদের একত্র করে এজন্যে খুব ধমক দিলেন। তারা চটে সবাই মিলে বিদ্রোহী হয়ে বললে—আগামী

১৩২