পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হল আমাদের বাড়িতে, সেইদিন এই ভলাণ্টিয়ার কোরের গোড়াপত্তন হল।

 ইতিমধ্যে আমার হাতে রুডিয়ার্ড কিপ্লিংয়ের একখানা ছোট গল্পের বই এসে পড়েছিল। তার একটা গল্পে আছে—ভারত সীমান্তে পাঠানদের মুলুকে একজন বাঙালী আই-সি-এস সাহেব ডেপুটি কমিশনার নিযুক্ত হয়েছেন। সমস্ত ডিস্ট্রিক্টের ভার তাঁর উপর। একবার যখন পাঠানরা হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে খুন-খারাপী ও লুটতরাজ আরম্ভ করলে তখন বাঙালী ডেপুটি কমিশনার সাহেব দুষ্কৃতের শাসন ও সুকৃত প্রজার পালনে রত না থেকে কোথায় পলাতক হলেন কেউ পাত্তা পেলে না। শেষে পাঠান চরেরা খুঁজে খুঁজে তাকে বের করলে যেখানে ভয়ে কম্পমান হয়ে লুকিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। তাঁকে ধরে ফেলে এক কোপে তাঁর গলাটা কেটে মণ্ডটা একটা শূলের উপর গেঁথে সারা শহরময় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল—“বাঙালী গিদ্দর” (শৃগাল)। এই গল্পটা পড়তে পড়তে লজ্জায় ঘৃণায় অপমানে আমার রক্ত টগবগ করতে থাকল। কি করতে পারি আমি এই অপমানের প্রতিশোধ নেবার জন্য? কিপ্লিংকে একখানা চিঠি লিখলুম, তার মর্ম—“আমার জাতিকে তুমি যে কলঙ্কিত করেছ সে কলঙ্ক ঘোচানর জন্যে আমি তোমাকে আহ্বান করছি—আমার ভাইদের একজন কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে! পাঁচ বৎসর সময় দিচ্ছি তোমায়। বন্দুক হোক, তলোয়ার হোক, যে কোন অস্ত্র তুমি ইচ্ছে কর নিজেকে তাতেই অভ্যস্ত করে নাও—আজ হতে পাঁচ বছর পরে সে তাতেই তোমাকে যুদ্ধদান করবে।”

 ঠিকানা জানিনে কোথায় পাঠাব। সন্ধান করতে করতে বিলম্ব হতে লাগল। এর ভিতর কটকে যাওয়ার জন্যে একটা তাগাদা এল। সেখানে উড়িষ্যার দেশভক্ত মধুসূদন দাসের সঙ্গে পরিচয় হল, তিনি প্রায় বাঙালী। কথায় কথায় তাঁকে একদিন ঐ প্রেরিতব্য চিঠির কথা বললুম। চিঠিখানা সঙ্গেই ছিল, তাঁকে পড়ে শোনালুম। তিনি বিজ্ঞ পুরুষ, পরামর্শ দিলেন—“ওকে যখন পাঁচ বছর সময় দিচ্ছেন, নিজেও পাঁচ বছর সময় নিয়ে অপেক্ষা করুন। এই পাঁচ বছরে বাঙালী ছেলেদের তৈরী করে নিন, সব রকম অশ্বচর্চায় পারদর্শী করে তুলুন। একটা নামডাক হোক তাদের। তারপর কিপ্লিংকে challenge পাঠাবেন। সেইটেই সঙ্গত হবে।” আমি কথাটার যুক্তিযুক্ততা স্বীকার করলুম। কলকাতায় ফিরে এসে সন্ধান করে করে শ্রীরামপুরের উকীল মহেন্দ্র লাহিড়ীর বাড়ির

১৩৪