পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছেলেদের কাছে তাদের তলোয়ার ও গৎকা প্রভৃতির শিক্ষক প্রোফেসর মার্তাজা বলে একজন মুসলমান ওস্তাদের খবর পেলুম। তাকে ডেকে আমাদের বাড়িতে পাড়ার ছেলেদের একটা ব্যায়াম ক্লাব খুলে মোটা মাইনে দিয়ে তার শিক্ষক নিযুক্ত করলুম। তখন আমরা কাশিয়াবাগান থেকে উঠে ২৬নং সার্কুলার রোডে এসেছি। এ বাড়িতে সামনে একটা বড় lawn আছে, আর পিছন দিকে পুকুর ধারে একটা ছোটখাট চৌকোনা জায়গা আছে, সেখানে ছেলেরা নানারকম অস্ত্র শিক্ষা করে। ক্লাবের সব খরচ—মার্তাজার মাইনে, বক্সিংয়ের দস্তানা, গৎকা, ঢাল, ছোরা, তলোয়ার, বড় লাঠি ও ছোট লাঠি প্রভৃতি সবেরই খরচ আমি দিই। ভবানীপুরের ছেলেরা আসে, শেখে। আমি বসে থাকি চেয়ারে একপাশে, সামনে টেবিল পেতে একটা খাতায় প্রতিদিন ছেলেদের হাজরি লিখি। ক্রমে ক্রমে এই ক্লাবের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল, দূর দূর থেকেও ছেলেরা আসতে লাগল এবং কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় এই রকম ক্লাব খুলে গেল। পুলিন দাস এলেন ঢাকা থেকে ‘অনুশীলন সমিতি’র সর্দার হয়ে। অধিকাংশ ক্লাবই আমার কাছ থেকে কিছু না কিছু সাহায্য পেত, জিনিসে বা টাকায়—‘অনুশীলন সমিতি’ও পেত, এবং সব ক্লাবরাই যে যখন পারে এক একবার করে মার্তাজাকে শিক্ষক করে নিয়ে যেতে লাগল।

আঠার

ছেলেবেলা থেকে আমরা রবিমামার গান গাইতুম—

একি অন্ধকার এ ভারতভূমি,
বুঝি পিতা তারে ছেড়ে গেছ তুমি,
প্রতি পলে পলে ডুবে রসাতলে
কে তারে উদ্ধার করিবে।
হীনতা লয়েছে মাথায় তুলিয়া,
তোমারেও তাই গিয়েছে ভুলিয়া।
তুমি চাও পিতা তুমি চাও চাও,
এ দীনতা পাপ এ দুঃখ ঘুচাও,
ললাটের কলঙ্ক মুছাও মুছাও
নহিলে এদেশ থাকে না।

১৩৫