পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বাঙ্গালী ছেলেদের বললুম—“তোমরা সেই ভারতের সন্তান, যাদের ধমনীতে আজও তোমাদের পূর্বগত ভারতবালক অনিরুদ্ধের রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। সে রক্ত কলঙ্কিত করো না, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিও না। যদি উদারভাবে বল, ক্ষমা করে এসেছ তাদের, তবে জেনো অক্ষমের ধর্ম নয় ক্ষমা। আগে ক্ষমা করবার অধিকারী হও, প্রবল হও, বলবত্তর হও, তবে তোমার চেয়ে যে হীনবল, তার প্রতি দয়া করো, তাকে ক্ষমা করো—তার আগে ক্ষমা করা ভীরুতার কাপুরুষতার নামান্তর।” দুতিন মাস পরে একটি ছেলে আগুয়ান হয়ে—চোরবাগানের বসু পরিবারের শৈলেন বসু—আর পাঁচ-দশটি ছেলের সঙ্গে আমাকে প্রণাম করে বল্লে—মা চল্লুম—ছমাস পরে আবার আসব।”

 “কোথায় যাচ্ছ?’’

 তারা বললে—“কাল আবার মাঠে খেলা আছে। এবার আর ফিরিঙ্গিদের প্রহার-ভয়ে আমরা পলাতক হব না—উত্তম-মধ্যম না দিয়ে ছাড়ব না। তার দরুন যদি জেলে যেতে হয় যাব—আইনেতে ছমাসের বেশি সে ধারায় সাজা নেই—তাই বলছি ছমাস পরে আপনার শ্রীচরণে আবার আসব।”

 তারা গেল, ফিরলেও সমুন্নত মস্তকে পরের দিন, ফিরিঙ্গিরাই এবার পলাতক হয়েছিল, কাউকে জেলে যেতে হয়নি।

 সে সময় স্টেট্‌সম্যানের এডিটর ছিলেন র‍্যাটক্লিফ সাহেব। তাঁর সঙ্গে ডিনারে, ইভনিং পার্টিতে মধ্যে মধ্যে দেখা হত, আমার কার্যকলাপ তাঁর অবিদিত ছিল না, কখনো কখনো সে সম্বন্ধে আমার সঙ্গে তাঁর খোলাখুলি আলোচনাও হত। মোহনবাগান যে বছর গোরাদের বিরুদ্ধে ফুটবল প্রথম জিতলে, সে বছর তিনি বিলাতে ও আমি পঞ্জাবে। “ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান”-এর সম্পাদকপদে অধিষ্ঠিত তখন তিনি। গোরাদের বিরুদ্ধে বাঙালীদের অভূতপর্ব জিতের খবরটা “ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ানে” দিয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে লিখলেন—“আমরা জানি এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আনন্দিত যিনি হবেন তিনি হচ্ছেন—সরলা দেবী—বাঙলার একটি নন্দিনী।”

 বলেছি নানা জায়গা থেকে নানা ছেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসত সে সময়। কেউ কেউ বলত তার মধ্যে পুলিসের গুপ্তচরও আছে। তাতে আমি ভয় পেতুম না, কারণ আমার লুকাবার কিছুই ছিল না। একদিন মৈমনসিং থেকে দুটি ছেলে এল—কেদার চক্রবর্তী ও তার সহচর ব্রজেন গাঙ্গুলী—পরে স্বদেশী গায়ক বলে যে প্রসিদ্ধি লাভ

১৩৮