পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এক সপ্তাহ পরে তারা ফিরে এসে বললে—“ব্রজেনবাবু এখন আমাদের নামে জমি দিতে অস্বীকার করছেন। আপনি আমাদের মাথার উপর দাঁড়িয়েছেন জেনে বলছেন আপনাকে দেবেন জমি, আমাদের নয়, সে বিষয়ে আপনার সঙ্গে লেখাপড়া করতে প্রস্তুত আছেন।” তারপরে তাঁর স্বদেশপ্রেমিক সেক্রেটারী মনোমোহন ভট্টাচার্যের সঙ্গে ব্রজেন্দ্রবাবু স্বয়ং এসে আমার সঙ্গে দেখা করে সব ঠিক করলেন। জমি আমার নামেই লেখাপড়া হল। জোৎ হাল সব আমার টাকায় আমার নামেই কেনা হল। ছেলেরা চালাবে ও যে ফসল হবে তার দ্বারা নিজেদের প্রতিপালন করবে। দুই-এক বছরে যখন আমায় টাকাটা ফিরিয়ে দিতে পারবে তখন সব কিছুর মালিক তারাই হবে। এই থেকে সুহৃদ সমিতির সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সংযোগ হল।

 এবার আমার দৃষ্টি গেল বাঙলায় একটি জাতীয় উৎসবের দিন নির্দিষ্ট করার দিকে। যেমন মহরমের দিন মুসলমানদের নানারকম অস্ত্রচালনার প্রদর্শনী চলে পথেঘাটে, তার জন্য সারা বৎসর ধরে নানা আখড়ায় নানা নেতার অধীনে নানা দল সেগুলি ভাঁজতে থাকে; যেমন রামলীলা ও দশেরা বা বিজয়া দশমীর দিন বঙ্গেতর হিন্দু-ভারতে বীরোচিত নানা খেলাধূলা চলে, বাঙলায় সেই রকম চালাতে হবে—কোন্‌ দিন? ওসব দেশের দশেরা আমাদের বিজয়া দশমীর মত নয়, তাতে প্রতিমার ভাসানের পর্ব নেই। আমাদের ভাসানের দিন সবাই তারই আয়োজনে ব্যস্ত, সেদিন খেলাধূলার বিশেষ অনুষ্ঠানের অবসর হবে না বাঙালীদের। অথচ ঐ শারদীয় ঋতুতে যে সময়ে শমীবৃক্ষ থেকে তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে পাণ্ডবরা বীরভোগ্যা বসুন্ধরায় অভিযানে নিষ্ক্রান্ত হয়েছিলেন, সেই সময়ই বাঙালীদের বলবীর্য সাধনার জাতীয় উৎসব না হলে বাকী সব হিন্দুদের সঙ্গে তারা ঐক্যসূত্রে বাঁধা হবে না। এইরূপ দ্বিধায় দোদুল্যমান যখন তখন বাঙালীর পঞ্জিকা হলেন আমার সহায়। হঠাৎ একদিন এ বছর দুর্গা পূজার ছুটি কবে থেকে আরম্ভ হবে তাই জানার জন্যে পঞ্জিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে চোখে পড়ে গেল দুর্গাপূজার অষ্টমীর আর একটি নাম ‘বীরাষ্টমী” এবং সেদিন “বীরাষ্টমী ব্রত’’ পালন করা ও ব্রতকথা শোনার বিধান। আমার আর নতুন করে কোন দিন উদ্ভাবন করতে হল না, যা চাচ্ছিলুম পেয়ে গেলুম। বহুকাল ধরে বাঙলা দেশের সংস্কারে যা রয়েছে কিন্তু বাঙালীর ব্যবহার থেকে লুপ্ত হয়ে গেছে তারই পুনরুদ্ধার করা। বাঙালী মায়েদের বীরমাতা

১৪০