পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হওয়ার লক্ষ্যপথে আবার নিয়ে আসা, সে বিষয়ে তাদের ব্রতের পুনঃপ্রচলন করা। ভীরু বাঙালী মাদের হাত দিয়েই ছেলের রক্ষাবন্ধন করিয়ে মায়ের নিজমুখে “বীরোভব” বলে ছেলেকে বীরোচিত খেলাধূলায় কাজেকর্মে প্রবৃত্তি দেওয়ান। মাতায় পুত্রে মিলিত হয়ে দেশকে গৌরবশিখরে সমুন্নত রাখার প্রকৃষ্ট সাধনা যে দেশের ধর্মোৎসবের একটি অঙ্গ ছিল—সে দেশ আজ এত হীন এত পতিত হয়ে আছে কেমন করে? আমার প্রাণ কেঁদে উঠল। আজ আমায় দেশের অনেক ছেলে ‘মা’ বলে। না জেনে আগে থাকতেই আমি তাদের কারো কারো হাতে রক্ষাবন্ধন করেছিলুম। এখন যখন জানলুম ঐ দিনে এদেশের দেশাচারই ঐ, মায়ের কর্তব্যই ঐ, তখন ক্লাবে ক্লাবে সকল খেলোয়াড়ের হাতেই ঐ দিন রাখী বেঁধে তাদের লোকসমক্ষে খেলায় প্রবৃত্ত করানই হল আমার ধর্ম—আমার প্রতি দেশমাতৃকার এইটিই আদেশ, নয়ত পঞ্জিকার ঐ পৃষ্ঠাটির প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ালেন কেন?

 সেই থেকে আধুনিক বীরাষ্টমী উৎসবের সূচনা হল। সেই বছরই মহাষ্টমীর দিন ২৬নং বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের মাঠে ছেলেদের অস্ত্রবিদ্যা-প্রদর্শনী ঘোষণা করা হল। কলকাতায় যত ক্লাব আমার জানা ছিল সকলের কাছে আমন্ত্রণ গেল—তাঁরা যেন উৎসবে যোগদান করেন ও খেলার প্রতিযোগিতায় নামেন। মুর্শিদাবাদের Dowager নবাব-বেগম সাহেবার কন্যা সুজাতালি বেগের পত্নী আমার বন্ধু ছিলেন। লেসের পরদা-ঘেরা একটা প্লাটফর্মের ভিতর আমার মা ও মাসিমাদের সঙ্গে তাঁকে বসিয়ে শেষে পরদার ভিতর থেকে বাড়ান তাঁর হাত দিয়ে উৎসবপ্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করালুম—কাউকে মুষ্টিযুদ্ধের জন্যে দস্তানা, কাউকে ছোরা, কাউকে লাঠি এবং প্রত্যেককেই একটি করে ‘বীরাষ্টমী পদক’—তার এক পিঠে লেখা “বীরোভব’-এক পিঠে “দেবাঃ দুর্বলঘাতকাঃ”। বীরাষ্টমী উৎসবের একটি অনুষ্ঠানপদ্ধতিও প্রস্তুত হল। তার প্রধানাঙ্গ হচ্ছে একটি ফুলের মালায় সজ্জিত তলোয়ারকে ঘিরে দাঁড়িয়ে দেশের পূর্ব পূর্ব বীরগণের বন্দনা-স্তোত্র ও তাঁদের নাম উচ্চারণ করে করে তরবারিতে পম্পাঞ্জলি প্রদান। সে স্তোত্রটি এইঃ-

বীরাষ্টম্যাং মহাতিথৌ পূর্ব পূর্বগতান্‌ বীরান্‌
নমস্কুর্য ভক্তিপূর্বং পুষ্পাঞ্জলিং দদাম্যহম্‌॥

১৪১