পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তিনি গাইতে গাইতে স্টেজের মধ্যিখানে বলে উঠলেন—“আমার দ্বারা এ হবে না। আমি মা লক্ষ্মীকে এ কথা বলতে পারব না, তাঁকে তাড়াতে পারব না। জন্ম জন্ম এসো মা, থেকো মা এই দীন অভাগ্যজনের কুটীরে।”—বলে স্টেজ ছেড়ে পালালেন।

 সেই ধনী ও বিলাসীদের প্রমোদগহে বরোদার রাজা গেলেন যখন গান-বাজনার টুঁ শব্দটি শোনা গেল না। সেদিন গোবরডাঙ্গার জমিদারপ্রমুখ বলশালী পুরুষগণের বলবীর্যের নানাপ্রকার নিদর্শন দেখান হল শুধু। বরোদাকে আর কিছু দেখান শুনান যেন বাঙালীর পক্ষে লজ্জাকর হবে, তাঁদেরও মনে তাই ঠেকল। সেদিন প্রমাণ হল দেশের ধাত বদলেছে।

 আর এক ব্যাপার হতে থাকল। নানা স্থান থেকে আমার কাছে দরখাস্ত আসতে লাগল তাদের দেশে আমার ক্লাবের কতিপয় ছেলেকে পাঠাতে—তাদের ওখানে খেলাধূলা দেখান ও শেখানরও জন্যে। পূজার সময় বাঙলা দেশে বড়লোকদের ঘরে বাইনাচ আনা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। বাঙালীর জাতীয় চরিত্রের প্যাটার্ন বদলাতে থাকল।

 এই সময় আমার নিজের সম্বন্ধে নানা গুজব আমার কানে ওঠাতে থাকলেন দুই-একটি গুজবী ব্যক্তি। সবই যে প্রীতিকর হত তা নয়। আমি চুপ করে সব শুনে যেতুম, কোন মন্তব্য করতুম না। শুনতে পেলুম আমার একটা নামকরণ হয়েছে বাঙলার ‘Joan of Arc’—‘দেবী চৌধুরাণী’ নামেও আখ্যাত হতে লাগলুম। একবার শুনলুম—রেলেতে একটা পার্সেল ধরা পড়েছে, ভিতরে বন্দুকে ভরা, উপরে কারো নাম নেই। পুলিসের বিশ্বাস আমি নাকি সেগুলির আমদানী করিয়েছি—পুলিস কিন্তু তদন্ত করতে আসেনি আমাদের বাড়িতে। আর একবার সি আর দাস আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে বলে গেলেন—“আপনি সাবধানে থাকবেন। সন্ধ্যেবেলা বালিগঞ্জে এ বাড়ি ও বাড়ি হেঁটে বেড়াতে বেরোবেন না। পুলিশ বলছে, আপনি বড্ড বাড়াবাড়ি করছেন, অথচ আপনাকে ধরবার, ছোঁবার কোন উপায় পাচ্ছে না। তাই তারা এবার পরামর্শ এঁটেছে কোনদিন সন্ধ্যেবেলায় আপনি বাড়ির বাইরে বেরোলে তাদের গুণ্ডা দিয়ে আপনাকে আক্রমণ করিয়ে জাহির করে দেবে গুণ্ডারা আপনার ক্লাবেরই ছেলে—আপনিই এই সব গুণ্ডা তৈরী করেছেন।”

১৪৪