পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ফিরতেন তিনি। তাঁকে দু-একটি তথাকথিত রসিক পুরুষ তাঁদের দেশের নর্তকীদের সম্বন্ধে নানা রকম প্রশ্ন করতেন, তিনি ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকতেন। এরা ছাড়া স্বামী বিবেকানন্দের আমেরিকান শিষ্যা মিসেস ওলেবুলের—যাঁর টাকাতেই বেলুড় মঠের ভিত্তি স্থাপিত হয়—বন্ধু, আমেরিকায় কিছুকাল অবস্থিত ও ইংরেজী শিক্ষিত একজন বিশিষ্ট লেখক, আর্ট সমালোচক ও উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী ওকাকুরা এসেছিলেন। তিনি একজন আদর্শ সামুরাই জাপানী—চেহারায়, ধরন-ধারনে, পোশাক-পরিচ্ছদে, সর্বদিকে চৌকস, জাতীয়তায় ভরা, এসিয়ার ঐক্যবাদে অনুপ্রাণিত, এসিয়ার প্রতি অংশকে—শ্যাম, জাভাদি এবং ভারতবর্ষ থেকে আরম্ভ করে পারস্য পর্যন্ত প্রতি খণ্ডটিকে দেশাত্মবোধে কানায় কানায় ভরে দেওয়ার আগ্রহবান। তাঁর একখানি প্রসিদ্ধ বই কলিকাতায় বসেই লেখা, মিসেস ওলেবুল, মিস ম্যাকলয়েড প্রভৃতির তত্ত্বাবধানে এবং নিবেদিতার টাইপিংয়ে। তাঁর বইয়ের আরম্ভের সেণ্টেন্স—‘Asia is one’, তার শেষ সেণ্টেন্স—Victory from within or Death from withou’'। তাঁর বইয়ের অন্তর্গত ভাব ও বাণী বাঙলা থেকে পঞ্জাব পর্যন্ত মুখে মুখে প্রচার হতে থাকল, লাজপৎ রায় প্রমুখ প্রত্যেক দেশভক্তের লেখনীতে লেখনীতে প্রতিফলিত হতে লাগল।

 এই সব জাপানীরাই সুরেনদার বাড়িতে অতিথি হয়ে বাস করতেন। আমাদের পরিবার ছাড়া আর এক বাঙালী পরিবারের কর্তার সঙ্গেও ওকাকুরার ভাব হল—তিনি ক্রীক রো-র সুবোধ মল্লিকের পিতৃব্য হেম মল্লিক। ওকাকুরা যখন জাপানে ফিরে যান, হেম মল্লিক মহাশয়ের পুত্র তাঁর সঙ্গে গেলেন।

 রুশ-জাপানী যুদ্ধের পর থেকে জাপানের সঙ্গে ভারতবর্ষীয়দের বাণিজ্যের সংযোগ বেড়ে গেল এবং বাঙলাদেশ থেকে অনেক ছাত্ররা গিয়ে নানাবিধ শিল্প শিক্ষা করতে লাগল। সিলেটের রমানাথ রায় সে সময়ে একজন প্রসিদ্ধ জাপান প্রত্যাগত সম্মানীয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ফিরে এসেই আমার সঙ্গে দেখা করেন—জাপানের অনেকানেক অদ্ভুত অদ্ভুত ছোট ছোট শিল্পজাত উপহার নিয়ে এসেছিলেন মনে পড়ে, যা তৈরি করতে জাপানীদের বেশি খরচ হয় না, অথচ যার ভিতর শিল্পনৈপুণ্যের পরাকাষ্ঠা পাওয়া যায়। জাপানের আদর্শে নানা রকম ছোট ছোট কলকারখানা ব্যবসা-বাণিজ্য চালান তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। অল্পদিনেই সকলকে মর্মাহত করে তাঁর অকাল-মৃত্যু হয়, দেশ একটি সুকর্মীকে

১৫০