পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হারায়। ছাত্রদের মধ্যে ব্রাহ্মসমাজের উমেশ দত্ত মহাশয়ের দৌহিত্র সত্যসুন্দর দেব আমার কতকটা সাহায্যে একটি স্কলারশিপ পেয়ে জাপানে ‘পটারি ওয়ার্কস’ শিখতে যান এবং দেশে ফিরে ‘বেঙ্গল পটারি’ খোলেন। খুব ভাল চলছিল। নিজের দেশের পেয়ালা পিরিচে চা খেতে পেয়ে বাঙালী ধন্য বোধ করছিল। কিন্তু যতদূর জানি, ভিন্ন ভিন্ন স্বত্বাধিকারীর হাতে পড়ে পড়ে শেষে কাশিমবাজারের মহারাজা মণীন্দ্র নন্দীর সময় বোধহয় এটা ফেল করে। এখন একটি লিমিটেড কোম্পানী হয়ে পঞ্জাবী ও দিল্লীওয়ালাদের শেয়ার আধিক্যে তাঁদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সত্যসুন্দর দেব এখন রূপনারায়ণপুরে ‘Behar Pottery’ নাম দিয়ে ও বেলিয়াঘাটায় তাঁর পুত্র সরল দেবের Bengal Porcelain Co. নামে স্বতন্ত্র পটারি ওয়ার্কস খুলেছেন। শুনতে পাই, এগুলির অবস্থাও খুব ভাল।


॥ কুড়ি॥

বিদেশী-শোষণ, একতা-সাধন

যে সব জাপানীরা সরেনদের বাড়ি এসে থাকতেন, তাঁরা সকলেই তাঁদের প্রয়োজনীয় সব জিনিসই নিজের দেশ থেকে এনেছিলেন—এমনকি, বাড়িতে চিঠি লেখবার কাগজ পর্যন্ত। আমি জিজ্ঞেস করলুম—“এত কাগজ লগেজের ভিতর ঠেসে সঙ্গে বয়ে এনেছেন কেন?” তাঁদের একজন উত্তর দিলেন—“এ আমাদের বাড়ির মেয়েরা পূরে দিয়েছেন। তাঁরা জানেন, ভারতবর্ষে কিছুই পাওয়া যায় না; কাগজও নয়, সুতরাং কাগজের অভাবে তাঁদের চিঠি লেখা আমাদের বন্ধ হয়ে না যায়।” হায়রে! এরা সেই কবি হেমচন্দ্রের—‘অসভ্য জাপান!’—যাদের চোখে পরাধীন ভারতবর্ষ এত বড় একটা অসভ্য দেশ—যেখানে কিছু নেই, যে দেশের লোকে কিছুই করতে জানে না, পারে না—একটুকরো কাগজ পর্যন্ত পাবার আশা নেই যেদেশে।

 সত্যিই ত! আছে বটে সবই, কাগজও আছে—জাহাজে ভরে ভরে আসা বস্তা বস্তা বিদেশী কাগজ। তারই গর্বে ভারতবাসী গর্বিত—

১৫১