পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাতে যে নিজের মুখে চুণ-কালি পড়েছে, তা ভাবি না। একটা ভারি ধাক্কা লাগল মনে। আমি এর পর থেকে ভারতীর মলাট আরম্ভ করলুম হলদে রঙের তুলট কাগজে—যাতে আজ পর্যন্ত পাঁজিপুঁথি লেখা হয়—ভিতরের কাগজ বদলাবার সাধ্য নেই, তাহলে ভারতীই বন্ধ হয়ে যায়। তখনও টিটাগড়ের বিদেশীয় মূলধনে পরিচালিত তথাকথিত স্বদেশী কাগজও এদেশে সুপ্রাপ্য নয়। ভারতীয় তুলট কাগজের মলাটকে প্রথম প্রথম সকলে আমার ঊনপঞ্চাশ-বায়ুগ্রস্ততার আর একটি পরিচয়রূপে গ্রহণ করলে, কিন্তু ক্রমে ক্রমে দেখতে পেলুম, দেশে সেই বায়ুটা সংক্রামক হতে থাকল। গোবিন্দচন্দ্র রায়ের গান আমার মন তোলপাড় করতে লাগল—

কত কাল পরে, বল ভারত রে!
দুখসাগর সাঁতারি পার হবে!
অবসাদ হিমে, ডুবিয়ে ডুবিয়ে,
ওকি শেষ নিবেশ রসাতল রে!
নিজ বাসভূমে পরবাসী হলে,
পর দাসখতে সমুদায় দিলে!
পর হাতে দিয়ে, ধনরত্ন সুখে,
বহ লৌহবিনির্মিত হার বুকে!
পর ভাষণ আসন আনন রে,
পর পণ্যে ভরা তনু আপন রে!
পর বেশ নিলে, পর দেশ গেলে,
তবু ঠাঁই নাহি মিলে দাস বলে!
তব নির্ভর নিত্য পরের করে,
অশনে বসনে গমনের তরে!
পর দীপ-মালা নগরে নগরে—
তুমি যে তিমিরে তুমি সে তিমিরে!

 এরই কাছাকাছি সময়ে নিজের খরচে কর্নওআলিস স্ট্রীটের উপর “লক্ষীর ভাণ্ডার” খুললুম। সেটি বাঙলা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করা শুধু মেয়েদের জন্যে একটি স্বদেশী বস্ত্রের ও দ্রব্যের ভাণ্ডার। একজন বিধবা ব্রাহ্ম মেয়েকে মাইনে দিয়ে তার বিক্রেত্রী নিযুক্ত করলুম। আশুবাবুর ভাইয়েদের মধ্যে যোগেশ চৌধুরী খুব স্বদেশী ছিলেন। তাঁর রুচিও সুন্দর ছিল। তখন তিনি ব্যারিস্টার হয়ে এসেছেন, হাইকোর্টের কাছে ‘চেম্বার্স’ নিয়েছেন। একদিন তাঁর চেম্বার্সে আমাদের সকলকে চায়ের নিমন্ত্রণ করলেন। তাঁর ঘরখানি আগাগোড়া স্বদেশী

১৫২