পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে নেতাদের সচেতন করবার জন্যে বদ্ধপরিকর হয়েছেন শোনালে, এবং ‘চা-পান না রক্তপান’ এই ছাপান প্লাকার্ড দেখালে সুন্দরীবাবুই তাঁদের আমার কাছে পাঠিয়েছেন জানালে। ছেলেবেলায় ইস্কুলে সুর করে করে পড়া কবিতা মনে পড়ল—

স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়।
দাসত্ব-শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।

 সে কবিতার গুনগুনানি আজ মনের ভিতর ঝনঝনানি হয়ে উঠল। স্বাধীনতার স্বপ্নে ভরপর আমার দৃষ্টি পরাধীনতার সহস্রফণা সর্পের প্রতি পড়ল। ভীরুতা ও কাপুরুষতার কলঙ্ক অপনোদন করে জাতিকে আত্মসম্মানে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা স্বাধীনতার পথে আরোহণের প্রথম সোপান বটে। কিন্তু স্বাধীনতা একখানি হীরক-খণ্ডের মত, নানা facets দিয়ে নানা রঙের আলো প্রতিফলন করে। স্বাধীনতার ডায়মণ্ডকাটে স্বায়ত্তশাসনই প্রধান কাট—তারই আলো প্রধান আলো। শাসন স্ব-আয়ত্তে থাকা চাই, নয়ত স্বাধীনতা কিসের? আইনকানুন গড়ার প্রতিষ্ঠান নিজেদের আয়ত্তে হওয়া চাই, তবেই ত একটা জাতি স্বাধীন। যে জাতির ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষিকার্য বিদেশীকৃত আইনের শাসনের দ্বারাই বিদেশীর হস্তগত সে জাতি কোনক্রমেই স্বাধীনতার গৌরবে গৌরবান্বিত হতে পারে না। যে জাতি জাতি হিসাবে hewers of wood and drawers of water থাকতে চিরবাধ্য হবে, যে জাতিকে শাসনের নামে তার রক্ত অনায়াসে শোষণ করে পরজাতি সমৃদ্ধ হতে থাকবে, যে জাতির কৃষকরা সোনার ফসল উৎপাদন করেও দুবেলা দুমঠো অন্ন পাবে না নিজের পেট ভরাতে বা স্ত্রী ছেলের মুখে তুলতে; ক্ষেতে বীজ বপন করতে না করতে বিদেশীর দাদন এসে তাদের যা-কিছু, সব পরের করে দেবে—সে জাতির স্বাধীনতা সুদূরপরাহত। পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিয়ে একখানা শরীর, একটা জাতি। পায়ের, হাতের, মাঝার কষ্টে মাথা যদি টনটন না করে, মাথা কাটা বাকী সব অঙ্গ হয়-তবে মাথার ব্যথায় হাত-পা নড়বে না, কোমর নিজেকে বাঁধবে না। তাই স্বাধীনতার প্লাটফর্মে সবচেয়ে বড় তক্তা জাতির পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঐক্যবুদ্ধি। শুধু মাথাগুলো একাট্টা হলে হবে না, পা-হাত-কোমরসমেত মাথাদের খাড়া হতে হবে। বুকখানা যে সকলের একই তা বুঝতে হবে—একই

১৫৪