পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লাভের একটা নির্ধারিত অংশ সম্পাদকের প্রাপ্য, কিন্তু সম্পাদক ও স্বত্বাধিকারী যদি একই লোক হয়, তবে ম্যানেজমেণ্টের খরচ বাদে বাকী সব উদ্ব‌ৃত্তটা স্বত্বাধিকারী একাই কেন গলাধঃকরণ করবে? যে সব লেখকের সহযোগিতায় কাগজখানি গরীয়ান ও স্বত্বাধিকারী লাভবান, সেই লেখকেরা লভ্যাংশের কিছু কিছু পাবে না কেন? শ্রমিক ও মুল ধনিকের সমস্যাটা, Capital ও Labourএর দ্বন্দ্বটা এ বিষয়ে বই পড়াপড়ি করে নয়, স্বতঃই সহজভাবে এই রকম করে আমার মনে উঁকি মারলে। আমি একটা নিয়ম করলুম—ভারতীর প্রত্যেক লেখককেই কিছু না কিছু পারিশ্রমিক উপহার দেব। এখনকার অনেক লোকেদের শুনে আশ্চর্য লাগবে যে, সেকালে এমন লেখকও ছিলেন যাঁরা লিখে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা তাঁদের আত্মসম্মানের পক্ষে হানিজনক মনে করতেন। তাঁদের মত এই—লিখব, সাহিত্যসেবা করব নিজের মনের আনন্দে, তার দরুন অর্থ গ্রহণ কেন? তাঁরা বলতেন, এতদূর অর্থলিপ্সা এই ভারতে অশোভন। যাঁরা অন্যমত ছিলেন, তাঁদের সাধ্যমত অর্থদান করে আমি আনন্দ পেতুম এবং অর্থ গ্রহণ অনেচ্ছুদের কোন না কোন আকারে বাণীর প্রীতির নিদর্শন পাঠাতুম নববর্ষে বা আশ্বিনে, হয়ত একটি সোনার ফাউণ্টেন পেন, হয়ত একখানি ভাল বই।

 ভারতীর এই নিয়ম জারীর ফল এই হল যে, প্রত্যেক মাসিক পত্রিকার সম্পাদক, স্বত্বাধিকারীরাই ভাল লেখকদের লেখার জন্যে পারিশ্রমিকের খাতা খুলতে বাধ্য হলেন। এর ফলে লেখকজাতির উপকার হল বটে, কিন্তু আমি নিজে ঠকলুম—কারণ ভারতীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবার জন্যে আমার চেয়ে অধিক বিষয়াদিসম্পন্ন বিজ্ঞ সম্পাদকেরা বিশেষ বিশেষ লেখকের পারিশ্রমিকের হার এত বাড়িয়ে দিলেন যে, তাঁরা তাঁদেরই একচেটে হয়ে গেলেন, আমি পড়লম ফাঁপরে।

 ‘ভারতী” হাতে নিয়ে মাসিক-পত্রিকাজগতে আরও একটি নতুনত্ব আমি ঢুকিয়েছিলাম, punctuality— যথাসাময়িকতা। দেখতুম তখনকার দিনে সাময়িক পত্রিকা কখনই ঠিক সময়ে বেরয় না—বৈশাখের পত্রিকা হয়ত আষাঢ়ে হস্তগত হল, আশ্বিনের অগ্রহায়ণে দেখা দিলে। আমার দৃঢ়পণ হল এই দোষটার সংশোধন করব। করলুমও। সময় অতিক্রান্ত করে বেরনর অপবাদ মুছে দিলমে মাসিক-পত্রিকা-জগৎ থেকে। দরোয়ান বেয়ারার হাতে প্র‌ুফ আনান ও পাঠানর অপেক্ষা না রেখে, নিজে গাড়ি করে গিয়ে গাড়িতে বসে বসেই শেষ প্র‌ুফটা দেখে ছাপাবার অর্ডার

১৫৮