পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিয়ে ছাপাখানার ‘ভূতদের' অস্থির করে তুলতুম। শুধু তাই নয়, দরকার হলে চামড়ার গন্ধে ভরপুর দপ্তরী পাড়ায় গিয়ে অপেক্ষা করে গাড়িতে করে দু-চারখানা ভারতী টাটকা বাঁধিয়ে সঙ্গে নিয়ে আসতুম, তারপর ভরসা হত ম্যানেজারকে ছেড়ে আসতে—সন্ধ্যের মধ্যে সবগুলো বাঁধিয়ে ছ্যাকরা গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে আসবে। শুধ, ঠিক দিনে বেরন নয়, ঠিক দিনে গ্রাহকদের হাতে পৌঁছান চাই। ভারতী হাতে এলেই পাঠকরা সচেতন হয়ে বলতেন—“ওঃ আজ মাসের ১লা যে, ভারতী এসে গেছে।” দেখাদেখি অন্য পত্রিকাদেরও চটপটে হতে হল। যথাসময়ে বেরনই মাসিক-পত্রিকা-জগতের নিয়ম বেঁধে গেল। তার অন্যথা করাটা নিয়মের বাত্য়য়।

 লেখক তৈরি করা আমার আর একটি সম্পাদকীয় কাজ ছিল। তৈরি লেখকের লেখা দিয়ে পত্রিকার পৃষ্ঠা ভরা অপেক্ষাকৃত সহজসাধ্য সাধনা। কিন্তু তাতেই আমি সন্তুষ্ট থাকতুম না। কোন কোন লেখা প্রথম দৃষ্টিতে রদ্দির টুকরীতে ফেলে দেওয়ার উপযুক্ত হলেও, তার ভিতরকার কতকগুলি মশলা উল্টে পাল্টে সাজালে দিব্যি জিনিস দাঁড়াবে অনুমান করে নিতুম। যে লেখাটার শরীরখানা এখন মড়ার মত, টেবিল থেকে টেনে বাইরে ফেলে দেবার যোগ্য, তারই পা থেকে মাথা পর্যন্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগলি কাটা চেরা করে নতুন করে বসিয়ে খাড়া করলে জীবন্ত হয়ে উঠবে এই সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তার উপর ‘অপারেশন' আরম্ভ করতুম—কঙ্কালের অস্থিগুলি reset করতুম, তার উপর মাংস ও চর্মের প্রলেপ দিয়ে রক্ত চলাচল করাতুম—হয়ে উঠত একটি জীবন্ত বস্তু। দুষ্টান্তস্বরুপ আমার চোখে ভেসে উঠছে একটি লেখা। বেহারের কোন বাঙালী বেহারী জীবনের দুই-একটা চিত্র লিখে পাঠিয়েছিলেন। দেখলুম সেগুলিতে বস্ত‌ু আছে কিন্তু লেখার কুশলতা নেই। সিরিজগ‍ুলির প্রথমটির আমি নামকরণ করলুম—“রাম অনুগ্রহনারায়ণের জন্মকথা?” নামেতেই সকলের কৌতূহল আকর্ষণ করলে। ভিতরের বস্ত‌ু হচ্ছে বেহারী গৃহে শিশুর জন্ম হলে বেহারী মা—রা কি করেন না করেন। “রাম অনুগ্রহনারায়ণ” বেশ ঢাক পিটিয়েই জন্মালেন এবং পাঠকের মনোরঞ্জক তার কীর্তিকলাপ ভারতীতে চলতে থাকল। দু-একবারের পর লেখক নিজেই তৈরি হয়ে উঠলেন—পরের সংখ্যাগলিতে আর আমায় বেশি বেগ পেতে হল না। এই রকম করে আমার হাতে সেকালে অনেক চলনসই সুলেখক গড়ে উঠলেন। আজকালকার মত তাঁদের এত প্রাচুর্য ছিল না। কিন্তু genius-

১৫৯