পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উপরেই ঘাটের ধাপের পাশে খানিকটা পেটান জমির উপরে বেতের চৌকি বিছিয়ে বসে আছেন জাপানী কিমোনো পরা মিসেস ওলেবুল ও মিস মাকলাউড, তাদের পাশে স্বামী বিবেকানন্দ সাধারণ সাধরণ গৈরিক বেশে, ছবিতে দেখা পোশাকে নয়, মাথায় পাগড়ি নেই। তবু তাঁকে দেখলেই একটা অসাধারণ দীপ্ত ভাব চোখে পড়ে। তাঁর সঙ্গে আছেন স্বামী স্বরুপানন্দ-যিনি পরে মায়াবতী অদ্বৈতাশ্রমের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। যেখানে মাটি ধ্বসে ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা নেই, সেই রকম একটা চওড়া মাটিপেটা জায়গা দেখে বসবার আয়োজন হয়েছে, চায়ের সরঞ্জাম সাজান হয়েছে। আমাদের পক্ষে এ রকম জায়গায় বসা একেবারে নতুন ও ভয়সঙ্ক‌ুল, এর নিরাপত্তা সম্বন্ধে যথেষ্ট সন্দেহ মনে উস‍্খুস্ করছিল। কিন্তু তার রমণীয়তাও যথেষ্ট অনুভব করছিলুম। মাথার উপর আবাধ আকাশ, পায়ের নীচে কলকলবাহিনী গঙ্গা, সামনে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির, সাধক রামকৃষ্ণদেবের কাহিনীসঙ্ক‌ুল, পশ্চাতে বেলুড় মঠগৃহ। তখনও সে মঠের মঠত্ব শ‍ুধু ঘাটের উপর একটি ভগ্নপ্রায় বাড়িতে। সেটির জীর্ণ-সংস্কার হয়ে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে এখন, আদি মঠ ঐ। তারই একটি ঘরে যেটি স্বামী বিবেকানন্দের শয়নাগার ছিল তাঁর স্মৃতি সকল রক্ষিত আছে। আমেরিকান মেয়েরা ও নিবেদিতাই বেশি কথাবার্তা কইতে লাগলেন, স্বরুপানন্দ তাঁদের সঙ্গী। স্বামী বিবেকানন্দ বেশির ভাগ নীরব, আমরাও। ফেরবার সময় স্বামী স্বরুপানন্দ আমাদের সঙ্গে নৌকায় যাত্রা করলেন। নানারকম গল্প হতে থাকল, নিবেদিতাই সব গল্প উস্কিয়ে দিতে লাগলেন। এই গেল প্রথম দিনের ভিজিট। তারপরে আরও দু-চারবার নিবেদিতা এসে এসে আমায় নিয়ে গেলেন। প্রত্যেকবারই সুরেন সঙ্গে থাকত। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর “রাজযোগ” প্রভৃতি পুস্তিকাগুলির এক এক কপি আমায় উপহার দিলেন, বইয়ের ভিতর পৃষ্ঠায় তাঁর নিজের হাতে ইংরেজীতে লেখা তাঁর “ভালবাসা-সহ প্রদত্ত।” আমি ভারতীর দুখানি কপি তাঁকে পড়তে দিলুম একবার—যাতে ‘আহিতাগ্নিকা' ও আমার ‘ক্ষণ শেষের—বিলাপ' ছিল। আমরা বসে থাকতে থাকতেই এক নিঃশ্বাসে তিনি পড়ে ফেললেন। নিবেদিতা পরে গল্প করেন স্বামীজী তাকে বলেছেন-“সরলার ‘education perfect', এই রকম education ভারতের সব মেয়েদের হওয়া দরকার।” তারপরেই একটা প্রস্তাব নিয়ে এলেন—স্বামীজীর সঙ্গে তাঁর ‘next trip'এ আমারও বিলেত যাওয়ার জন্যে, সেখানে ভারতের

১১
১৬১