পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মেয়েদের প্রতিনিধি হয়ে প্রাচ্যের আধ্যাত্মিক বার্তা প্রতীচ্যের মেয়েদের শোনাবার জন্যে। আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পূর্বে যে পত্রাবলী আমায় লিখেছিলেন তার একখানিতেও তাঁর এ বিষয়ের কল্পনা জলন্ত ভাষায় ফুটে উঠেছিল—সেগুলি তাঁর জীবনচরিতে সন্নিবিষ্ট আছে। এমন অমূল্য সুযোগ গ্রহণ করার সৌভাগ্য আমার হল না। আমার নিজের মনের অপ্রস্তুততা, সঙ্কোচ এবং অভিভাবকদের অমত এই দুইই প্রবলভাবে বাধা দিলে। নিবেদিতাকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীজী চলে গেলেন। সে-ই তাঁর বাণী-বাহিনী হল। ফিরে এলে আর দুই একবার মাত্র তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। শেষ দেখা চিরস্মরণীয়—কি আতিথ্য, কি সম্মান, কি সৎকারে আমায় আপ্লুত করলেন। সেদিনকার ভোজ একটি ভৌগোলিক ভোজ, আর তার প্রত্যেক জিনিসটি তাঁর নিজের হাতে রাঁধা। নরওয়ে, কাশ্মীর, ফ্রান্স, আমেরিকা কোন দেশের সুস্বাদ, আহার্যের পরিচয়ের বাকী ছিল না। তাঁর শিষ্যেরাও সকলে শশব্যস্ত আমায় কি করে খাতির দেখাবেন, কি করে সেবা করবেন। খাওয়া শেষ হলে যখন তাঁদের একজন চিলিম্‌চি ও গাড়ু নিয়ে এসে আমার হাত ধোয়াতে দাঁড়ালেন আমি বিদ্রোহী হয়ে পড়লুম। তাঁদের এতদুর অবনত হতে দিতে পারিনে আমার কাছে। আমি কে? আমার ভিতর যে দেবীকে দেখেছেন তাঁরা, সে কে? আমি ত মানবী-তনয়া। সে তাঁদেরই কল্পনারই একটি সৃষ্টি।

বাইশ

ভারতী সম্পাদনসূত্রে অধ্যাত্ম-বিজ্ঞানে প্রবেশ

অনেক দিক থেকে অনেক জলধারা এসে একটি স্রোতস্বতীকে ভরে তুলে। স্বামী বিবেকানন্দের সংস্পর্শে আমার জীবননদী আর একটা ভাবের ধারায় ভরাট হল। ভারতীর সম্পাদনসূত্রে কত অজানা লোকের সংস্পর্শে এসেছিলুম, তার মধ্যে স্বদেশে বিদেশে এক নবযুগের প্রবর্তক স্বামী বিবেকানন্দ আমারও অন্তরের উপাদানে এক নতুন তত্ত্বের সমাবেশ করলেন—সেটি হচ্ছে আধ্যাত্মিক জীবনের আকাঙ্ক্ষা। অনেকে অনেক কিছু মনে করত স্বামী বিবেকানন্দকে। জাতীয়তাবাদীরা তাঁকে

১৬২