পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাঙলায় যেমন বাড়ির খোকা বড় হয়ে গেলেও পাড়াপড়শী সকলেই তাকে ‘খোকা’ বলেই ডাকে। গুজরাটি হিন্দু মা-বাপেরই এই খোকাটি, হিন্দুস্থানের ছেলেটিই আজ হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত, উদ্যত-আয়ুধ। এতে যে তাঁর কতদূর আত্মাবমাননা করা হচ্ছে, তা তিনি উপলব্ধি করছেন না কিসের প্রেরণায়, কিসের উত্তেজনায়? বলাৎ চালাচ্ছে তাঁকে কি? ‘‘কাম এষ ক্রোধ এষঃ!” নেতৃত্ব-কামনা, একটা দল গড়ে দলপতিত্ব কামনা। আমার হিন্দু-মুসলমান ঐক্যবাদে এ কথা ছিল না যে, কেউ কারো অন্যায় আবদার বরদাস্ত করে যাবে। গান্ধীর অহিংস অসহযোগে যেমন নেই ইংরেজ গবর্নমেণ্টের পতাকাতলায় থেকে প্রজাবংশের প্রতি রাজবংশের অন্যায় অসম-আচরণ সহ্য করা, বরঞ্চ অসহযোগের প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে এই অন্যায়কারী গবর্নমেণ্টের বিরুদ্ধে দাঁড়ানর জন্যে একটা উত্তেজনাময় কর্মপ্রেরণায়, চুপচাপ বসে থেকে সহ্য করার উপদেশ নয় সেটা।

 যখন এক রাত্রিতে “ঔরঙ্গজেব” অভিনয়ের সময় হঠাৎ একদল বঙ্গীয় মুসলমান যুবক এসে পশ্চিমী গুণ্ডাদের দিয়ে মিনার্ভা থিয়েটার ঘেরাও করলে এবং অমর দত্ত স্টেজ ছেড়ে পিছনের দরজা দিয়ে পলাতক হলেন, তখন অমর দত্তের কাপুরুষতায় আমার ধিক্কার ধ্বনিত হয়ে উঠেছিল ভারতীর পষ্ঠায়।

 ময়মনসিংহে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কনফারেন্সের সম্পর্কে সুহৃদ সমিতি আমাকে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যায় তাদের সাম্বৎসরিক উৎসবে। সেই সময় তাদের ‘বন্দে মাতরম্‌’ ধ্বনি কালে সমগ্র ভারতের জাতীয় ধ্বনিতে পরিণত হল, সে কথা আগে বলেছি। সেই সময় আমার সম্বর্ধনার জন্যে তারা যে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তার মধ্যে “আনন্দমঠ’’-এর অভিনয় অন্যতম ছিল। প্রাদেশিক কনফারেন্সে সুরেন্দ্র বাড়ুয্যে প্রমুখ অনেক বড় বড় নেতারা সমাগত হয়েছিলেন, আমার পিতাও এসেছিলেন। আমি ও আমার পিতা স্যার টি পালিতের ভ্রাতুষ্পুত্র ব্যারিস্টার নৃপেন পালিতের বাড়িতে ছিলুম।

 প্রথম দিন সুহৃদ সমিতির অধিবেশনে যখন নানাবিধ অশ্বক্রীড়ার প্রদর্শনী চলছে, আমি সভানেত্রীর আসনে আসীন রয়েছি, হঠাৎ কেদার চক্রবর্তী আমায় একটু উঠে অন্তরালে যেতে অনুরোধ করলেন। আমি গেলে বললেন,—‘‘আপনার কাছে একটা বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে। আমরা আপনাকে দেখানোর জন্যে “আনন্দমঠ” অভিনয়ের

১৭১