পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আয়োজন করেছি। তাতে মুসলমান শ্রোতাদের ধর্মপ্রাণে আঘাত লাগার মত কথা যেখানে যেখানে আছে বলে সন্দেহ হয়েছে, তা আমরা নিজে হতেই বাদ দিয়েছি। তবু প্রাদেশিক কনফারেন্সের কর্তা-ব্যক্তিরা আমাদের বলে পাঠিয়েছেন—“এবার কলকাতা থেকে অনেক কষ্ট করে কয়েকটি মুসলমান বন্ধুদের যোগাড় করে এনেছেন সুরেন্দ্রবাবু কনফারেন্সে যোগ দিতে। তোমরা ময়মনসিংহের হিন্দু ছেলেরা যদি এই সময় ‘আনন্দমঠ’ কর তারা থাকবে না বলছে, কনফারেন্সে যোগ দেবে না, কলকাতায় ফিরে যাবে। সুতরাং তোমাদের ‘প্লে’ বন্ধ কর, আমাদের সিরিয়স কাজে বাধা দিও না।” দুই-একটি সহকর্মী সহ কেদার চক্রবর্তী। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমায় বললেন—“আপনি উপদেশ দিন, আমরা কি করি এস্থলে।”

 আমি বললুম-“লীডারদের ডেকে তাঁদের সামনে রিহার্সাল করে দেখাও। তাঁদের মতে তোমাদের অলক্ষ্যে এখনো যদি আপত্তিকর কোন ভাষা কোন শব্দ প্রয়োগ থেকে গিয়ে থাকে ওর ভিতর তা ছেঁটে দাও।”

 তারা বললে—“সে প্রস্তাব করেছি আমরা। তাতে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। তাঁরা বলেন—অংশবিশেষ ছাঁটলে, শুধু দুচারটে কথা বা সেণ্টেন্স ছাঁটলে হবে না, মুসলমানদের ও বইখানার আগাগোড়াতেই আপত্তি। সুতরাং ন্যায় হোক অন্যায় হোক তাদের আপত্তি এস্থলে মানতেই হবে, ময়মনসিংহে এখন ওর অভিনয় বন্ধ রাখতেই হবে।”

 আমি শুনে বললুম—“বল কি? সুরেনবাবুর অনুগামী চেলাদের এই কথা? যে সুরেন্দ্রনাথের motto হচ্ছে ‘Surrender not!’ আমারও সেই motto—অন্যায় আবদারের কাছে ভয়বশে surrender কোরো না। আমার উপদেশ এই—অভিনয় তোমাদের জারী রাখ। এ স্থলে তোমাদের কর্তব্যই তাই।”

 তার পরদিন সকালে গৃহস্বামী নৃপেন পালিত আমার কাছে এসে জানালেন-“অনাথ গুহ প্রভৃতি এখানকার পোলিটিকাল লীডাররা, ও শহরের বড় বড় মাতব্বর ব্যক্তিরা সবাই আপনার কাছে ডেপুটেশনে এসেছেন।’’ আমার মতো বয়ঃকনিষ্ঠের কাছে পিতৃতুল্য বয়োজ্যেষ্ঠদের ডেপুটেশনে আসা কি কারণে? আমি কৌতুহলী হয়ে তাঁদের কাছে গেলুম। আমার পিতাও সেখানে উপস্থিত। আমি যেতে তাঁদের মুখপাত্ররূপে অনাথবাবু বললেন—“আপনার কাছে আমাদের একটি বিনীত

১৭২