পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বৈবাহিক সম্বন্ধ হতেই পারে না তাদের সঙ্গে হাজার মনের মিল হলেও দুধের উপর সরের মত একটা পাৎলা পার্থক্যের স্তর সদাই বর্তমান থাকে—সেটা বোধ হয় জাতিভেদগত স্তর। যে সকল গোঁড়া হিন্দু-বাড়ির মেয়েদের সঙ্গে আমাদের ভাবসাব হল, তাঁদের গৃহে সবরকম শুভকার্যে আমরা যেতে থাকলুম বটে, কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই কায়স্থ হওয়ায় একটু বাইরের লোকের মতই যেতুম। সে বাইরের ভাব ঘুচে গেল ‘ইঙ্গবঙ্গ’ সমাজ বলে একটি সমাজ গড়ে উঠলে এবং আমরা তার অন্তর্ভুক্ত হলে। তাতে যেন পারিবারিক পরিধিটাই বেড়ে গেল। এই সমাজ প্রধানতঃ সাধারণ ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী সমাজ, তাঁদের মধ্যে যাঁরা আঢ্য ও বিলাত প্রত্যাগত তাঁদের সমাজ—দুচারটি খ্রীস্টানও তাতে ছিলেন। সাধারণ ব্রাহ্মদের নিজস্ব সাধর্ম্যিক একটি সমাজও ছিল, যাতে সব অবস্থার ব্রাহ্মব্রাহ্মিকারা ও তাঁদের পুত্রকন্যারা সামিল ছিলেন। আমাদের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক ছিল না। এই ধর্মগত পরিবারের চিত্র ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের কন্যাদের গৃহে ও ব্যবহারে অত্যুজ্জ্বল দেখেছি। কলুটোলা বা গোরফের বৈদ্য আত্মীয়রাই শুধু তাঁদের নিজস্ব আত্মীয় ছিলেন না, নববিধান সমাজের প্রচারকমাত্রের, কেশবচন্দ্রের ভক্তমাত্রের পরিবার যেন তাঁদের অন্তরঙ্গ আপন পরিবারস্থ লোক ছিলেন। কুচবিহারের মহারাণী সুনীতি দেবী বা মৌরভঞ্জের মহারাণী সুচারু দেবীর সঙ্গে নববিধানী সর্বসাধারণ মেয়েদের নিশ্চয়ই পার্থক্য ছিল, কিন্তু তাঁরা সেটা তাঁদের স্বভাবসিদ্ধ বিনয়ে ও ভদ্রতায় ঢাকবারই চেষ্টা করতেন, তাদের অনুভব করতে দিতেন না।

 এই ধার্মিক এক-পরিবারত্বের অভিজ্ঞতা মহর্ষির পরিবারে আমাদের ছিল না। কারণ ৬নং যোড়াসাঁকোর বাইরে যাঁরা আদি ব্রাহ্মসমাজভুক্ত ছিলেন—তাঁরা শুধু সমাজে যেতেন আসতেন, উপাসনায় যোগদান করতেন ও ব্রহ্মসঙ্গীত শুনে তৃপ্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন। মহর্ষির পরিবারের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের মিলন করাতে সঙ্কুচিত হতেন, অন্তত কোনদিন করাননি। তার একটা কারণ বোধ হয় তাঁরা পুরুষেরা বাইরে এসে নিরাকার ব্রহ্মোপাসনা করলেও, তাঁদের বাড়ির ভিতরে মেয়েদের দরুনই কোন রকম পুরানো আচার অনুষ্ঠানের পরিবর্তন হয়নি। তাই আমাদের সাধর্ম্যিক সমাজ বলে কিচ্ছু ছিল না।

 ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজে আমরা অল্পে অল্পে গ্রস্ত হলুম—বিশেষ করে কাশিয়াবাগান ছেড়ে যখন বালিগঞ্জে উঠে এলুম। নিজ বালিগঞ্জে তখন

১৭৫