পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তারপর পূর্ববঙ্গের মেয়েরা যে অনেকেই সুন্দর মিষ্টান্ন তৈরি করতে পারেন তার পরিচয় পেয়েছিলুম। সেটা জাতীয়ভাবে কাজে লাগাবার চেষ্টা করলুম—“পৌষপার্বণ”-এর নিমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়ে। অনেকগুলি মেয়েকে আমাদের বাড়িতে সকালেই আমন্ত্রণ করলুম বাড়িতে এসে সকলে মিলে নানারকম পিঠেপুলি, পাটিসাপটা, সরু চাকলি প্রভৃতি তৈরি করতে। একটা রীতিমত যজ্ঞিবাড়ি বসে গেল যেন। মধ্যাহ্নে সবাই একত্রে মিলে খিচুড়ি খেয়ে আবার তাড়াতাড়ি পিঠে গড়তে লেগে গেল। কাজ শেষ হলে তবে খানিকটা বিশ্রাম করে, অপরাহ্ণে মুখ-হাত ধুয়ে, সঙ্গে আনা ভাল কাপড় পরে ফিটফাট হয়ে মাঠে নিমন্ত্রিতদের সঙ্গে মিলিত হল। তাদের বাড়ি থেকে মা-বাপ ও অন্যান্য বোন-ভাইরাও ততক্ষণ এসেছেন।

 আর একবার ‘নবান্ন’র নিমন্ত্রণ করলুম। চায়ের পেয়ালায় প্রথমে এক এক পেয়ালা নবান্ন দেওয়া হল, তারপরে চা ও তার আনুষঙ্গিক সব কিছু এল।

 এই সময় ছেলেমেয়েদের একটি মিশ্র সঙ্গীত ক্লাবও খুলেছিলাম—আমাদের বাড়িতেই—ইংরেজী ও দেশী উভয়বিধ সঙ্গীতাভিজ্ঞদের সঙ্গীত-চর্চার জন্যে। এতে অতুলপ্রসাদ ও তাঁর বোনেরা সবাই ছিলেন। তাদের মুখে ও অতুলের নিজের মুখে তাঁর গান প্রথম শোনার সুযোগ হল। ‘উঠগো ভারতলক্ষ্মী’ সার্কাসে শোনা একটি ইতালীয় সরে বসান। বাঙ্গলা কথায় সুরটি ভারি খাপ খেয়েছে। আরও কতকগুলি প্রেমের গানের কথায় ও সুরে মুগ্ধ হলুম। তার মধ্যে আজও বিশেষ করে মনে পড়ে—

“আজি স্বরগ আবাস তুমি এসো ছাড়ি।
আজি বরষে বরষা বিরহ বারি!
আজি ফুলে নাহিক মধুগন্ধ,
মলয়ে নাহিক মৃদু মন্দ,
জীবনে নাহিক গীত ছন্দ
তোমারে ছাড়ি।”

 তাঁর যে যে গান তখন শুনেছিলাম সবগুলির স্বরলিপিই “শতগানে” আছে।

 ক্লাব থেকে মধ্যে মধ্যে একটি করে কন্সার্ট হত—তাতে বাইরের সকলকে নিমন্ত্রণ করা হত। শেষ কন্সার্ট হয়েছিল দিদির আয়োজনে

১৭৭