পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

খুব ধুমধাম করে আমার একটা জন্মদিনে। এ-ক্লাব চলল ততদিন, যতদিন মেয়ে মেম্বররা একে একে প্রজাপতির নির্বন্ধে দূরে সরে না পড়লেন।

 সাহিত্য ও সঙ্গীতের ভিতর দিয়ে প্রজাপতির বার্তা নিয়ে আমারও কাছে তাঁর দূত দুই-একবার উঁকি-ঝুঁকি মেরেছিল—কিন্তু বিধাতার দূত তাকে বিদায় করে দিলে—“এখনো সময় আসেনি” বলে। বিধাতার বিধান-পাশ হাতে নিয়ে সময় এল কয়েক বছর পরে পঞ্চনদের কূল হতে এবং আমায় বন্ধনে বাঁধলে।

 “হিন্দু-মুসলমান”এর উপর বক্তৃতাটি ভারতীতে বেরয় এবং ইংরেজীতে ভাষান্তরিত হয়ে এলাহাবাদের ‘‘Hindusthan Review’’তে দেখা দেয়। তাছাড়া “কংগ্রেস রিপাব্লিক” বলে ভারতীতে লেখা আমার আর একটি বাঙলা প্রবন্ধও “Hindusthan Review’’তে ইংরেজীতে প্রকাশিত হয়। এই দুটি প্রবন্ধ ভারতের উত্তর-পশ্চিমবাসী অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। লালা লাজপৎ রায় সেই সময় একবার বাঙলা দেশে আসেন। প্রবন্ধ দুটি পড়ে ও যোগেশ চৌধুরীর কাছে ‘‘বীরাষ্টমী” প্রভৃতির কথা শুনে তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আমি বাড়ি ছিলুম না। শুনলাম, এত আগ্রহ ছিল তাঁর—দু-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে বসে ছিলেন। কিন্তু সেদিন আমার ফিরতে অনেক দেরী হওয়ায় অবশেষে চলে যান। পরের দিন আবার আসেন। এবার আমার সঙ্গে দেখা হল ও অনেকক্ষণ ধরে অনেক কথাবার্তা হল। তিনি জিজ্ঞেস করায় দেশকে স্বাধীন করার জন্যে আমি আমার প্ল্যান ব্যক্ত করলুম, তিনিও তাঁর প্ল্যান কতকটা বললেন। মিলে গেল অনেক, দুজনেরই মতে পেতে হবে—Victory from within or mighty death from without.

‘‘আত্মনৈব আত্মানং জয়তে
আত্মৈব রিপুরাত্মনাং।”

 ইতিমধ্যে বরোদা থেকে অরবিন্দ ঘোষের চিঠি নিয়ে আমার কাছে এলেন যতীন বাঁড়ুয্যে। অরবিন্দের দাদা অক্সফোর্ড-খ্যাত কবি মনোমোহন ঘোষ আমার খুব বন্ধু হয়েছিলেন। তাঁর অতি সুন্দর সুন্দর কবিত্বরসপূর্ণ চিঠিতে আমার ডেক্স ভরে গিয়েছিল। দুই ভাই-ই প্রকৃতিগত ‘visionary’ ছিলেন। একজনের vision বা স্বপ্ন কাব্যেই পর্যবসিত ছিল, আর একজনের vision কার্যে অনূদিত হল। যতীন বাঁড়ুয্যে যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষার জন্যে বরোদা সৈন্যে ভর্তি হওয়া একজন

১৭৮