পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নারদ ঋষি এসে আমায় উপদেশ দিচ্ছেন এই সুস্পষ্ট স্বপ্ন দেখতুম।

 আশ্রম যে শুধু একটি আধ্যাত্মিক ভূমি নয়, তার ভৌতিক স্তরও যে একটি আছে—কারণ যেখানেই মানুষের নিবাস সেখানেই তার দেহধারণের উপকরণাদির সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রয়োজন এবং সে জন্যে বিধিব্যবস্থার একান্ত আবশ্যক—সে দিকটা আমার মনে ইতিপূর্বে কখনো উদ্ভাসিত হয়নি। এতদিনে সেকালের আরণ্যকদের সলিল-প্রচুর ও মানব পল্লী থেকে অনতিদূর কুটীর নির্মাণ করে বসবাস বিধানের মর্ম হৃহয়ঙ্গম হল। এখানে দেখলুম আশ্রমাধ্যক্ষ স্বামী স্বরূপানন্দ—যাঁর সঙ্গে বেলুড়ে প্রথম সাক্ষাৎ হয়—“প্রবুদ্ধ ভারত” নামীয় অতি উচ্চাঙ্গের একখানি ইংরেজী পত্রিকা সম্পাদন করছেন, ব্রহ্মচারীদের জন্য বেদান্ত ক্লাসে নিয়মিত অধ্যাপকতা করছেন, আবার তিনিই অন্য সময় অতিথি-অভ্যাগতদের সৎকারের ত্রুটি না হয় বলে আশ্রমের ভাণ্ডার-গৃহ থেকে চাল, ডাল, আটা, কিসমিস, পেস্তা, বাদাম প্রভৃতি বের করে রৌদ্রে শুখতে দিচ্ছেন, নিজের হাতে পোকা বেছে ঝেড়ে ঝুড়ে আবার ভাঁড়ারে তুলছেন। কোন কর্মই তাঁদের পক্ষে অবহেয় নয়। ধীরে ধীরে আমার মনে অনুপ্রবেশ করলে যে এই হল জ্ঞানযোগ ও কর্মযোগের সমন্বয়; এঁদের এই গৃহস্থতুল্য কর্মের ভিতর গৃহস্থের স্বার্থপরবশতা নেই, শুধু কর্তব্যের ও পরসেবার অনুপ্রেরণা রয়েছে। আশ্রমবাসী প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন নিয়তকর্ম। শীতকালে এঁদের পথঘাট বরফে আচ্ছন্ন হয়ে যায়, আশ্রমেরই এক অংশ থেকে আর এক অংশে গতিবিধি দিনের পর দিন বন্ধ থাকে। শীতাগমের পূর্বেই তাই নিজেদের গাছ থেকে কাঠ কেটে স্তূপীকৃত করে রাখার একান্ত দরকার। এই আশ্রম এমন জায়গায় সন্নিবিষ্ট যার তিন মাইলের মধ্যে কোন লোকালয় নেই, পোস্টাপিসও নেই, আবার এরই ভিতর দিয়ে পাক-দণ্ডি অর্থাৎ shortcut করে সাধু-সন্ন্যাসীরা ক্রমাগত বদরিকেদারাভিমুখে যাত্রা করেন—তাঁদের শীত-গ্রীষ্ম ঋতুভেদ নেই। আমাদের মত সৌখীন আগন্তুকেরা যদিও বেছে বেছে ভাল সময়েই আসেন তবু তাঁদের আতিথ্যের জন্যেও সর্বপ্রকার উপকরণ সকল সময় প্রস্তৃত রাখার দরকার হয়—কেউ কেউ হয়ত শীত পর্যন্ত থেকে যান। যাঁরা সক্ষম, তাঁদের এখানে অবস্থান ও পান-ভোজনের জন্য একটা মাসিক হার নির্ধারিত আছে। মাদার সেভিয়ার যিনি এই বিভাগের অধিষ্ঠাত্রী তাঁর কাছে শুনলুম এ বিষয়ে তাঁদের কঠোর নিয়ম অবলম্বন করতে হয়েছে, কারণ ইতিপূর্বে এমন অনেক আগন্তুকেরা মাস মাস এখানে কাটিয়ে গেছেন

১৮৩