পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আশ্রমের দুই-একজন বাঙালী সুগায়ক সন্ন্যাসীদের কাছে রামপ্রসাদী ও শ্যামাবিষয়ক নানা গানে ভরপুর হলুম। মিসেস সেভিয়ার ও আমার সঙ্গে কোন কোন সাধুরা রোজ সায়াহ্নে ভ্রমণে বেরতেন। কোন একটা বসবার মত স্থানে পৌঁছলে সেখানে সকলে মিলে বসতুম ও সাধুরা গান গাইতেন, আমাকেও মাঝে মাঝে গাইতে হত। তাঁদের কাছে শোনা গানের মধ্যে দুই-একটি এখনো মনে বেজে উঠে—

“কেন মা তোর পাগলিন বেশ!"

অস্তমান সূর্যের আলো সম্মুখের পাহাড়ে প্রতিফলিত হত। সেই আলোর ভিতর যেন এই ধরাতলের কাণ্ডকারখানার ভিতর পাগলিনীর মত ছোটা মা ফুটে উঠতেন। আমার বুকের ভিতর কি একটা ঝনঝনা জাগত। মারাট্টা ছেলেটি একদিন বললে সে এখান থেকে তিব্বত যাত্রা করবে। পথে মানস-সরোবর, কৈলাস প্রভৃতি পড়বে। ‘পরাও পরাও' করে যাবে, রাস্তার মধ্যে মধ্যে ‘চটি' আছে, সেখানে খাওয়া-দাওয়া পাবার কোন কষ্ট হবে না। তার আয়োজন ও দৃঢ়তা দেখে আমারও মন নেচে উঠল—আমিই বা কেন না যাব এই সুযোগে? মিসেস সেভিয়ার কিন্তু অনুমোদন করলেন না। মাকে চিঠি লিখে খবর দিলেন বোধ হয়। দিদির কাছ থেকে পত্রপাঠ লম্বা চিঠি এল মায়ের শরীর একেবারে ভেঙ্গে গেছে, কখন কি হয় ঠিক নেই। মায়ের শেষ ইচ্ছা যে আমি বিয়ে করি। নিশ্চয়ই আমি তাঁর এ ইচ্ছা পূর্ণ করতে বাধা দেব না। তাঁরা জানেন আমি যে সে বিয়েতে মত করব না, কি সিভিলিয়ন কি রাজারাজড়া যার সঙ্গে সম্বন্ধ করুন আমার মনের মত না হলে রাজী হব না। তাই তারা এবার এমন পাত্র ঠিক করেছেন যে, মনের মত হবেই, যাকে বিয়ে করলে আমার জীবনের লক্ষ্যের সঙ্গে একে- বারে মিলবে। ইনি পঞ্জাবের বড় ঘরের ব্রাহ্মণ। সমস্ত ভারতবর্ষের ব্রাহ্মণে ব্রাহ্মণে বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপিত হয়ে ঐক্য সাধিত হোক—কর্তাদাদা মহাশয়ের এই ইচ্ছা ছিল সকলে জানে। দাদার কুচবিহার রাজগৃহে অসবর্ণ বিবাহে দাদামশায় মর্মাহত হয়েছিলেন সবাই জানে। আজ তিনি বেচে থাকলে আমার এ বিবাহ সম্বন্ধে কত উল্লসিত হতেন। তার উপর ইনি আর্যসমাজের একজন বড় নেতা, যে আর্য সমাজের সঙ্গে আদি ব্রাহ্ম- সমাজের যোগ স্থাপনের জন্য বলুদাদাকে পঞ্জাবে দৌত্যে পাঠিয়েছিলেন। তা ছাড়া তিনি একজন ন্যাশনাল পেট্রিয়ট, সুবক্তা, সুপুরুষ।

 কোনদিক থেকেই আমার আপত্তি করবার মত নয়। অবশ্য তাঁর পূর্বে বিবাহ হয়েছিল, এখন তিনি বিপত্নীক। আমি যেন তাঁকে না দেখে-শুনে,

১৮৫