পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাঁর সঙ্গে আলাপ-পরিচয় না করে, গোড়া থেকেই নামঞ্জুর না করি। “তুই একবারটি আয়, দেখ, তারপরে শেষ যা বলবার বলিস। একেবারে গোড়াতেই বেকে বসিসনে, মার বুকে মৃত্যুশেল হানিসনে।” এই কাতর অনুনয় দিয়ে দিদি চিঠি শেষ করেছিলেন। অনিচ্ছুক ছেলেকে ঠিক যে রকম করে বিয়েতে প্রবৃত্ত করাতে হয়, সহজে সম্মত না হলে মাতা বা পিতার প্রাণসংশয়ের ভয় দেখিয়ে সেইটিই বিয়ের পক্ষে শেষ বড় যুক্তি- রূপে পেশ করা হয়, এ স্থলে আমার সম্বন্ধেও তাই করা হল। আমায় নামতেই হল। হিমালয়ের অরণ্যবাসে দাঁড়ি পড়ে গেল।

 মা-রা তখন শরীর শোধরাবার জন্যে বৈদ্যনাথে আছেন। আমার গন্তব্য হল সেইখানে, কলকাতায় নয়। পথে লক্ষ্ণৌ আসে, গাড়ি বদলাতে হয়। অতুলপ্রসাদকে খবর দিলম কয়েক ঘণ্টার জন্যে সেখানে থামব। তিনি এলেন স্টেশনে আমায় নিতে। শুধু নিতে এলেন না। জানালেন আমার জন্যে লক্ষ্ণৌবাসী বাঙালীদের তরফ থেকে একটা বৃহৎ সভার আয়োজন হয়েছে, তাঁদের মানপত্র গ্রহণ করে তবে দেশে যেতে পাব আমি, সেজন্যে দু-একদিন তাঁর বাড়িতে থাকতে হবে। তাই হল। প্রবাসী বাঙালীদের স্নেহ ও সম্মান-ভাজন হয়ে নিজেকে কৃতার্থ জ্ঞান করলুম। আমি যে কতদুর প্রবাসী হতে চলেছি তা তখনো কেউ জানেন না। অতুলের বাড়িতে হিন্দুস্থানী কংগ্রেস-ভক্তদের খুব সমাগম ছিল। তার মধ্যে গঙ্গাপ্রসাদ বা সেকালের একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ও আমার পরিচিত। তিনি অতুলের বাড়িতে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলে আমি তাঁকে বললুম—“আপনার সঙ্গে আমার একটি বিশ্বস্ত কথা আছে, একটি পরামর্শ চাই।” তাঁকে আমার ভাবী স্বামী সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম। জিজ্ঞেস করলাম তাকে জানেন কি না ও তাঁর সঙ্গে আমার বিবাহ বিষয়ে তাঁর কি মত?

 তিনি বললেন—খুব জানেন তাঁকে। যদি আমার বিবাহিত জীবন গ্রহণ করতেই হয় তবে এমন উপযুক্ত জীবন-সঙ্গী দুর্লভ। সঙ্গে সঙ্গে বললেন-“এ কথাও বলি, আপনার বিবাহ-বার্তায় দেশের লোক খুশী হবে না, দেশ একজন পূর্ণমাত্রার আত্মোৎসর্গীকে হারাবে এই ভয় করবে।”

 বৈদ্যনাথে পৌঁছিবার আগেই দিদি ষড়যন্ত্র করে বিয়ের সব আয়োজন একেবারে পাকা করিয়েছেন–আমার হাত-পা একেবারে বেধে দিয়েছেন–নড়চড় করবার আর উপায় রাখেননি। স্টেশনে দেখি আমি ‘কনে’ হয়ে এসেছি। রেলগাড়ি থেকে একেবারে পাল্কীতে পদার্পণ

১৮৬