পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করলুম, ভূমিতে পা পড়ল না। বিবাহের দিনলগ্ন পর্যন্ত সব ঠিক করে রেখেছেন। বরযাত্রীদের জন্যে একটি বাড়ি নির্দিষ্ট করে সেখানে তাঁদের আনিয়েছেন। নিমন্ত্রণপত্র গেছে চতুর্দিকে। সবই আমার অগোচরে—যাতে আমি আর টুঁ শব্দটি মাত্র করার সময় না পাই—বুঝি যেন এখন কিছু করতে গেলেই মা-বাবাকে অপদস্থ করা হবে। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলুম। পরের দিনই আমার গায়ে হলুদ। বরপক্ষের কর্তা ভবানীপুরের শঙ্কর পণ্ডিতের কাছে ফর্দ পাঠিয়ে দিদি দস্তুরমাফিক সব জিনিস সেখান থেকে সকালে হাজির করিয়েছেন। সেদিন ভোরে রাঁচী থেকে নতুন মামা মেজমামা মেজমামী এসেছেন, বোলপুর থেকে রবি মামা বড় মামা, মধুপুর থেকে বড় মাসিমা কৃতী ও সুকেশী বৌঠান, কলিকাতা থেকে ইন্দিরা প্রমথবাবু ও সুরেন। বাড়ি আত্মীয়-স্বজনে ভরে গেছে, উৎসবের সানাই বাজছে। বিকালে ক্ষণিকের জন্য বরকে দেখলে কনে—চেহারায় চোখ ঝলসায় বটে। মন যাই বলুক। তারপর দিন সন্ধ্যাবেলা বিয়ে। পালাবার পথ নেই আর, ছাড়াছাড়ি নেই।

 আমায় জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বিবাহের অনুষ্ঠানটি যদি আর্যসমাজের পদ্ধতি অনুসারে হয়—যাতে আদি ব্রাহ্মসমাজে ব্যবহৃত সমস্ত বৈদিক মন্ত্রই আছে, উপরন্তু হোমের মন্ত্রও আছে ও হোম আছে—তাতে আমার আপত্তি হবে কি না? আমি বলেছিলাম-“না, হোমে আমার আপত্তি নেই, বরঞ্চ বিশেষ সম্মতিই আছে।”

 সে সময় মধুপুর ও বৈদ্যনাথে যে সকল পরিচিত বন্ধুবান্ধবরা হাওয়া বদলের জন্য এসেছিলেন তাঁদেরও অনেকে সস্ত্রীক আমার বিবাহ-সভায় উপস্থিত হলেন। বিয়ে হয়ে গেল। একেবারে অমোঘ বন্ধন—জন্মজন্মান্তরের কর্মবন্ধন। দুচারদিন পরে সবাই মিলে কলিকাতায় ফিরে যাওয়া হল। সেখানে গিয়ে আমার বিবাহ উপলক্ষে ধুমধাম করে একদিন সান্ধ্য ভোজনে কলিকাতার বন্ধু-বান্ধবীদের নিমন্ত্রণ করলেন বাবামশায় ও মা। বরপক্ষ থেকে অনেক আর্যসমাজী বড়লোক এলেন, দীপচাঁদ পোদ্দার, স্যার ছাজুরাম, এ বি রেলওয়ের প্রধান ম্যানেজার রায় বাহাদুর বলেয়ারাম প্রভৃতি। সেই সময় ‘বীরাষ্টমীর’ দিনও সমুপস্থিত। ক্লাবের ছেলেরা আমার অনুপস্থিতিতে আমাদের বাড়িতেই পূর্ববৎ সব আয়োজন করেছে। ‘বীরাষ্টমীর’ দুই-একদিন পরেই লাহোর যাত্রা করতে হল। স্টেশনে আর্যসমাজী বন্ধুরা তাদের প্রথামত নানা রকম ফল, মিষ্টান্ন ও মাল্য নিয়ে আমাদের সম্বর্ধনা করতে এলেন। সারাপথ—পাটনা, মির্জাপুর,

১৮৭