পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কানপুর, এলাহাবাদ, সাহারাণপুর, আম্বালা, জলন্ধর, অমৃতসরে এইরূপ অভ্যর্থনা চলতে থাকল। লাহোর স্টেশনে ভীষণ ভিড়। আর সবাইকে টপ্‌কে স্যার মহম্মদ শফি আমার গাড়িতে পৌঁছে আমায় সর্বপ্রথম মাল্যভূষিত করলেন। তাঁর গাড়িতে করেই আমি আমার নতুন গৃহে পৌঁছুলুম—এ গৌরব তিনি আজীবন করতেন।

ছাব্বিশ

শ্বশুরকূল

লাহোরের বাড়িতে পৌঁছে কদিন ধরে পাঁচটি বা দশটি করে মিছরির কুঁদো ও তদনুপাতে ছোয়ারা বাদাম ও মঙ্গলসূত্রসহ টাকা হাতে নিয়ে যাঁরা নূতন বধূকে দেখতে এলেন, তাঁদের কেহই প্রায় শ্বশুরকুলের সম্পর্কীয় নয়, সকলেই আর্যসমাজী ভ্রাতাদের স্ত্রী, মাতা ও বোন বা ব্যারিস্টার উকীলদের আত্মীয়া। এঁরা বাদে সর্বপ্রথম এলেন সপত্নীক লালা লালচাঁদ, লাহোরের তখনকার পিতৃনামের গোলাব সিং প্রেসের অন্যতম অংশীদার। তাঁরা দুই ভাই, মোহনলাল ও লালচাঁদ। দুজনেরই দুটি দুটি স্ত্রী, তথাপি দুজনেই অপুত্রক। এই তাঁদের মায়ের দুঃখ। লালচাঁদের প্রথমা স্ত্রী সেকেলে, পূজা-আর্চা নিয়ে থাকেন। তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী বিলাত-ফেরৎ স্বামীর অভিরুচি অনুযায়ী চলেন, ইংরেজী বলেন, স্বামীর সঙ্গে বল-ড্যান্সেও যান। সেকালের পক্ষে অত্যন্ত প্রগতিশালিত্ব। আমাকে তাঁরা দুই বাহু বাড়িয়ে অভ্যর্থনা করলেন। লালচাঁদ অতি মিশুক লোক। যখন কলিকাতায় গোলাবসিং প্রেসের শাখা খুলে অবস্থানের সঙ্কল্প করলেন, আমার পিতার কাছে পরিচয়পত্র নিলেন আমার বিশেষ বন্ধু বলে কলিকাতায় নতুন আগন্তুক হিসেবে সাহায্য পাবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কলিকাতায় তাঁর সঙ্গিনী হলেন যে স্ত্রী—যাঁর সঙ্গে আমার লাহোরে ভাব হয়েছিল তিনি নয়—ইতিমধ্যে রাতারাতি সকলের অগোচরে বিবাহিতা তৃতীয়া পত্নী। লাল লালচাঁদের সকল পুত্রকন্যারা এই স্ত্রীর গর্ভজাত। কিন্তু তাঁর ব্যবহার পূর্ব পত্নীদের প্রতিও অনবদ্য রইল, তাঁরা নিজের নিজের মহলে সমান সমাদরে স্বামি-বিচ্ছিন্ন

১৮৮