পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুরুষের ক্ষণিক মোহ ও মর্জির উপর। আমরা দেখতে পাই বিশেষ কারণ উপস্থিত না হলে, এককালে একাধিক বিবাহ আইন-সঙ্গত হলেও ভদ্রসমাজে তা অপ্রচলিত, তার দৃষ্টান্ত অতি বিরল। রাজা-রাজড়ার গৃহে এটা এখনও প্রচলিত থাকার একটা কারণ কন্যাবহুল রাজ-পিতামাতারা এ বিধি আইন-বিরুদ্ধ হলে বিপন্ন হবেন—তাঁরা বলেন, তাহলে ‘‘আমাদের কন্যারা যাবে কোন্‌ ঘরে?”

 প্রথম প্রথম ‘সমাজী’ অর্থাৎ আর্যসমাজী যেসব মেয়েরা আমাকে দেখতে আসতেন তাঁদের পরিচয় পেতুম কেউবা ‘চাচী’ (কাকিমা), কেউবা ‘তায়ী’ (জ্যেঠাইমা), কেউবা ‘ভাবি’ (বৌদিদি), সুতরাং ধরতে পারতুম না সত্যিকারই সম্বন্ধ—না পাতান। ক্রমে ক্রমে শ্বশুরকুলের আত্মীয়দের ও ‘সমাজী’ আত্মীয়াদের পার্থক্য পরিষ্কার হতে থাকল। শ্বশুরকুলেও আর এক নতুন জিনিস পঞ্জাবের—স্কটল্যাণ্ডের ‘clan’-এর মত, বাঙলায় তা নেই। আমার স্বামী যে শ্রেণীর ব্রাহ্মণ, জানলুম সেই শ্রেণীকে বলে মহিয়াল ব্রাহ্মণ, তাঁরা ৬টি অন্তঃশ্রেণীতে বিভক্ত—দত্ত, বালি, ছিব্বর, মোহল, লৌ ও ভীমবল। এঁদের পরস্পরের বৈবাহিক আদান-প্রদান হয়, অন্য শ্রেণীর ব্রাহ্মণকে এঁরা কন্যাদান করেন না, তাঁদের ঘর থেকে কন্যা আনতে পারেন। এঁরা সবাই শস্ত্রধারী ব্রাহ্মণ, যখন শত্রু আসে দ্বারে তখন অস্ত্র দিয়ে তার প্রতিরোধ করেন, অন্যথা জমির চাষবাস নিয়ে থাকেন—agriculturist পর্যায়ভুক্ত, land alienation act-এর দ্বারা প্রশাসিত। ইংরেজ শাসনে ভারতের দ্বার-রক্ষক এরা, ভারত সীমান্তে “Kings own guides” নামে পল্টন শুধু, এঁদেরই জাতভাইয়ের দ্বারা বিরচিত। আলেকজাণ্ডার যখন পঞ্জাবের দ্বারে সমুপস্থিত হন, এঁদেরই পূর্বপুরুষ রাজা জয়পাল ও অনঙ্গপাল তাঁকে যুদ্ধদান করেন।

 লাহোরে আমার স্বামীর বাসাবাড়ি মাত্র, তাঁর পিতৃপিতামহাগত গৃহ ও জন্মভূমি ‘কঞ্জরূর’এ। সে গ্রামখানি হিমালয়ের পাদতলে গুরুদাসপুর জেলায় অবস্থিত। তার পুরো নাম—‘কঞ্জরূরএ দত্তা’ অর্থাৎ দত্তদের কঞ্জরূর। কিম্বদন্তী এই, একবার লাহোরের এক নবাবের জন্য একটি সুন্দরী রাজপুত-কন্যা হরণের প্রচেষ্টায় এঁদের কোন পূর্বপুরুষ বাধা দিতে গিয়ে সবংশে নিহত হন। কিছুকাল পরে সেই নবাব কি এক প্রকার কর্ণপীড়াগ্রস্ত হন। অনেক হাকিম-বৈদ্য দেখান হল—কিন্তু কেউ কিছু করতে পারলে না। শেষে একজন জ্যোতিষী বললেন,—“অমুক যুদ্ধে আপনার দ্বারা অসংখ্য ব্রাহ্মণ-হত্যা হয়েছে—তার ফলে এই শাস্তি।

১৯০