পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঢালা হয়, সে ভাত স্তূপাকার হয়ে প্রায় কড়িকাঠ স্পর্শ করে। তারই পরিমাণে ব্যঞ্জনাদি প্রস্তুত করে দিনে সেই ভাতব্যঞ্জন ও রাত্রে লুচিতরকারী—লোক গুণে গুণে পাথরের থালাবাটিতে সাজিয়ে মহলে মহলে ঘরে ঘরে দিয়ে আসে বামুনেরা।

 এ বাড়ির একটা প্রথা উল্লেখযোগ্য এখানে। যেমন যেমন একটি নতুন শিশুর আবির্ভাব হয়, অমনি অন্নপ্রাশনের পর থেকে তার জন্যে একসেট নতুন জয়পুরী সাদা পাথরের থালাবাটি ও গেলাসের অবতারণা হয়। সাদা পাথরের বাসন দাসীদের হাতে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নিঃশেষ হলে ক্রমে মুঙ্গেরের কালো পাথরের সেট তার স্থান পূরণ করে। আমরা তাতেই খেতে অভ্যস্ত। পরিষ্কার ঝক্ঝকে কাঁসা পিতলের বাসনের মর্যাদা জানিনে, সে শুধু সরকার বামুন ঝি চাকরদের ব্যবহার্য বলে জানি। মহর্ষির নাত্নীদের কেউ কেউ শ্বশুর গৃহবাসের পূর্বে তার ব্যবহারে রপ্ত হননি। কাঁচের বাসনের চলন ছিল না তখন। চায়ের পেয়ালা পর্যন্ত ছিল না, কারণ চা খাওয়া ছিল না। আমাদের দুধের বরাদ্দ ছিল। প্রত্যেক বালক-বালিকার জন্য দাসীদের জিম্মে করা এক একটি রূপার বাটি থাকত—তাতে করে দুধের ঘর থেকে দুধ এনে ছেলেদের দেওয়া হত। দুধের ঘর ও রান্নাঘর আলাদা।

 ঘরে ঘরে বামুন ঠাকুরেরা যে খাবার দিয়ে যেত সেটা হল সরকারী রান্নাঘরের যোগান, এর উপরে প্রতি মহলে তোলা উনুনে গিন্নীদের নিজের নিজের রুচি ও স্বামীর ফরমাস অনুযায়ী বেসরকারী বিশিষ্ট রান্না আলাদা করে হত। সরকারী ও বেসরকারী রান্নায় আকাশ-পাতাল তফাৎ থাকত। বড় হয়ে ছাত্রদের মেসের দাল-মাছের বর্ণনা শুনে আমাদের ছেলেবেলাকার রান্নাঘর থেকে দাল-ঝোলের কথা মনে পড়ত।

ভাঁড়ার

 বাড়ির উত্তরে অনেকখানি খোলা জায়গা ছিল—সেটা হল গোলাবাড়ি। অর্থাৎ সেখানে ধান, দাল প্রভৃতি শস্যরাজি সঞ্চিত থাকত। ঘি, তেল, নুন, চিনির ভাঁড়ার বারবাড়িতে অন্যত্র, তাও সরকারদের হাতে। তারাই প্রয়োজনমত এসব জিনিস বামুনদের বের করে দিত। বাড়ির ভিতরে গিন্নীদের হাতে ছিল শুধু তরকারী ও ফল মিষ্টির ভাঁড়ার।

১০