পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বোধেই প্রথম মহাসমরকালে বাঙালী যুবকদের রণবৃত্তি গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেন।

 পঞ্জাৰেৱ হাঙ্গামা-মহাত্মা গান্ধী-রাজনৈতিক কার্য: যে আশা- ভরসায় সরলা দেবী ও অন্যান্য নেতারা বাঙালী যুবকদের সৈন্যদলে ভর্তি হইতে উদ্বুদ্ধ করেন তাহা অকস্মাৎ বিলুপ্ত হইয়া গেল। সর্বত্র বিপ্লবী সন্দেহে ভারতবাসিগণকে আটকবন্দী করিবার ব্যাপক ক্ষমতা লইয়া রৌলট আইন বিধিবদ্ধ হইল। ইহ্যর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভকে মহাত্মা গান্ধী প্রকাশ্য রূপ দিলেন ‘সত্যাগ্রহ' কথাটির মধ্যে। বিক্ষোভের ফলে নানা স্থানে হাঙ্গামা উপস্থিত হইল। বিক্ষুব্ধ জনতাকে দমন করিতে গিয়াই সরকারী ধুরন্ধরগণ এই হাঙ্গামা বাধাইল। পঞ্জাবে এই হাঙ্গামা চরমে উঠিল। ইহার পরিণতি হয় জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডে। দত্তচৌধুরী পরিবারের উপর সরকারের কোপ পড়িল বিশেষ করিয়া। ‘হিন্দুস্থান’ উর্দ, ও ইংরেজী সংস্করণ দুই-ই সরকার বন্ধ করিয়া দিলেন। ‘হিন্দুস্থান' প্রেসও বাজেয়াপ্ত হইল। পঞ্জাবের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পণ্ডিত রামভজও অনির্দিষ্ট কালের জন্য নির্বাসিত হইলেন। সরলা দেবীর এই সময়কার তেজস্বিতা সকলকেই চমক লাগাইয়া দেয়। তাঁহাকেও গ্রেপ্তার করিবার প্রস্তাব হইয়াছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে কোন মহিলাকে আটক করার রীতি এদেশে তখনও চালু হয় নাই; একারণ কর্তৃপক্ষ তাঁহাকে গ্রেপ্তার করা হইতে নিরস্ত হন। পঞ্জাবে ব্রিটিশের অকথ্য অত্যাচারের আভাস পাইয়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ সরকার-প্রদত্ত ‘নাইট’ উপাধি বর্জন করিলেন।

 ভারতীয় নেতৃবৃন্দের পঞ্জাব প্রবেশে বাধা উঠিয়া গেলে তাঁহারা একে একে তথায় গমন করেন। সরলা দেবীর গৃহে মহাত্মা গান্ধীর আবাসস্থল স্থিরীকৃত হইল। সরলা দেবীর সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর পরিচয় কুড়ি বৎসরেরও পুরানো। তিনি স্বয়ং মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ ও কর্ম- পন্থায় বিশ্বাসী। পুত্র দীপক গান্ধীজীর সবরমতী আশ্রমে অধ্যয়নরত। সত্যাগ্রহ প্রচেষ্টায়ও তাঁহার সমর্থন ষোল আনা। মহাত্মা গান্ধীকে এই সময় বেশ কিছুকাল সরলা দেবীর গহে অবস্থান করিতে হয়। কারণ তখন কংগ্রেস তরফে যে কমিটি পঞ্জাবের অনাচার, মায় জালিয়ানওয়ালা- বাগের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে লিপ্ত ছিল, তিনি ছিলেন তাহার একজন সদস্য। ব্রিটিশের অত্যাচার-অনাচারের গুরুত্ব ও ব্যাপকতা দেশ-বিদেশে জানাজানি হইতে বাকী রহিল না। ১৯১৯ সনে অমৃতসর কংগ্রেস;

২০০