পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কংগ্রেস অধিবেশনের পূর্বেই পঞ্জাবের নির্বাসিত নেতাদের মুক্তি দেওয়া। হইল; রামভজও স্বগৃহে ফিরিয়া আসিলেন।

 ভারতীয় রাজনীতিতে নতন কর্মধারার প্রয়োজন বিশেষভাবে অনুভূত হইল। মহাত্মা গান্ধী অহিংস অসহযোগের প্রস্তাব আনিলেন। ১৯২০ সনে কলিকাতার ন্যাশনাল কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন, সভাপতি-লালা লজপৎ রায়। ইতিমধ্যে ৩১শে জুলাই নিশীথে অকস্মাৎ লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক মত্যুমুখে পতিত হইলেন। বাংলা ও মহারাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক যোগাযোগ স্থাপিত হইয়াছে গত শতাব্দীর শেষ দশকেই। লোকমান্য তিলক এবং সরলা দেবীর ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের কথা আত্মস্মৃতিতে পাওয়া যাইবে। তিলকের মৃত্যুতে সরলা দেবী স্থির থাকিতে পারিলেন না। তিনি ছুটিয়া গেলেন বোম্বাইয়ে তিলকের বিরাট শব-শোভাযাত্রায় যোগদানের জন্য। তিলকের স্মৃতিরক্ষায় একাধিকবার নিজের মনোবেদনা অনবদ্য ভাষায় তিনি ব্যক্ত করিয়াছিলেন।

 ‘শহীদ’ কথাটির আজকাল খুবই চল। ইংরেজী ‘martyr' শব্দের বাংলা ‘শহীদ’। কিন্তু দৈহিক মত্যু না ঘটিলেও কোন বিশেষ আদর্শ বা মতবাদের জন্য যিনি আত্মবলি দৈন তাঁহাকেও ‘শহীদ’ বলা যায়। ঠিক এই অর্থেই সরলা দেবী চৌধুরাণী মহাত্মা গান্ধী প্রবর্তিত অহিংস আন্দোলনের প্রথম মহিলা ‘শহীদ'। তিনি মনপ্রাণ দিয়া অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়াছিলেন। চরখা-খদ্দরের প্রবর্তনে তিনি মহাত্মা গান্ধীর দক্ষিণহস্তস্বরূপ ছিলেন। অসহযোগ প্রচেষ্টার প্রথম দিকে তিনি ছিলেন গান্ধীজীর একান্তই সমর্থক। পণ্ডিত রামভজ ছিলেন ক্ষাত্রতেজো- দীপ্ত। তিনি অহিংসা তথা অহিংস আন্দোলনের তেমন পক্ষপাতী ছিলেন না, হয়ত এই কারণে উভয়ের মধ্যে খানিক মতানৈক্য উপস্থিত হইয়াছিল।

 হিমালয়-বাস—পণ্ডিত রামভজের মৃত্যু—লাহোর ত্যাগ: সরলা দেবী প্রাক-বিবাহ যুগে স্বামী বিবেকানন্দ তথা রামকৃষ্ণ মিশনের ঘনিষ্ঠ সংস্রবে আসিয়াছিলেন। কিছুকাল হিমালয়ে মায়াবতী অদ্বৈতাশ্রমে গীতা, উপনিষদ প্রভৃতি শাস্ত্রচর্চায়ও তিনি মন দেন। বিবাহিত জীবনে তিনি সম্পূর্ণ গার্হস্থ্য জীবন যাপন করেন। কিন্তু এই সময়ে আবার হিমালয়ের আহ্বান আসিল। তিনি স্থির থাকিতে পারিলেন না। শাস্ত্রে পুরুষের যেমন ‘বানপ্রস্থ' অবলম্বনের বিধি আছে, তেমনি নারীর কেন থাকিবে না? আর্যসমাজ-কর্তৃপক্ষ এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে বিলম্ব

২০১