পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সকাল বেলায় ৭টার সময় ঘণ্টা বাজে দালানে উপাসনায় যাওয়ার জন্য। বউঝিয়েরা বিবাহের সময় অর্জিত স্ব স্ব চেলি পরে সেখানে যান। নাত্নীরা বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দাদামশায়ের কাছ থেকে একখানি করে যে চেলি উপহার পায়, তাই পরে তাদের দালানে যেতে হয়। সেই হল নাত্নীদের দীক্ষার চিহ্ন। বিনা চেলিপরা খুব ছোট মেয়েরাও দালানে যেতে পারে কিন্তু যেতে বাধ্য নয়। নাতিরা উপনয়ন না হলে দালানে বসার অধিকারী হয় না। অনধিকারে তারাও গিয়ে ব্রহ্মসঙ্গীত শুনতে পারে ও শোনে। বিষ্ণু হলেন তখনকার গায়ক।

 দাদামহাশয় বাড়ি থাকলে উপাসনা ও উপদেশ খুব জমে। নয়ত বাঁধাগতের মত হয়। সেখান থেকে এসে, যে যার ঘরে গিয়ে পট্টবস্ত্রখানি খুলে তুলে রেখে সাদাসিধে কাপড় পরে ভাঁড়ার ঘরে আসেন।

 মামী-মাসিদের প্রাতঃকালীন ভাঁড়ার ঘরের বৈঠকটি বেশ জমে। উপরেই ভাঁড়ার ঘর—তাঁরা সেখানে বসে সবাই মিলে তরকারী কোটেন। দাসীরা মাছ কোটে নীচে রান্নাঘরের কাছে।

 এই তরকারী কোটার আসরে বড় মাসিমা, সেজ মাসিমা ও ছোট মাসিমা, বড় মামী, নতুন মামী ও ন-মামী এবং সরোজা দিদি (বড় মামার বিবাহিতা জ্যেষ্ঠা কন্যা[১]) ও সুশীলা দিদি (সেজ মাসিমার জ্যেষ্ঠা কন্যা[২])—এই কজনের নিত্য উপস্থিতি দেখতে পেতুম। দিদিও যেতেন। আমার মা কখনো আসতেন না।

 পূজার মন্দিরে যেমন দুটি প্রকোষ্ঠ থাকে, একটি বহিঃপ্রকোষ্ঠ যেখানে সকলে যায়, একটি অন্তঃপ্রকোষ্ঠ যার ভিতর কেবল পুরোহিত ঢোকেন, মাসিদের ভাঁড়ারেও তেমনি দুটি ভাগ ছিল। বহির্ভাগে যেখানে তরকারী সাজান, বানান ও বণ্টন করা হত সেখানে সবাই এসে বসতেন, কাজ করুন আর নাই করুন। অন্তর্ভাগে শুধু বড় মাসিমা প্রবেশ করতেন। আমরা ছোটরাও বাইরে বড়দের কোল ঘেঁষে এসে বসে পড়তুম, সিমলে বাড়িতে মা-র মজলিসের মত এখানে আমাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ নয়, এখানে আকৃষ্টচিত্তে বড়দের কার্যকলাপ দেখতুম ও তাঁদের গল্পগুজব শুনতুম। ওদিকে অন্তঃপ্রকোষ্ঠে প্রবেশপরায়ণা বড় মাসিমার দিকেও আমাদের চোখ থাকত। সেখানে থাকের পর থাকে ভাঁড়ের পর ভাঁড়ে

১১

  1. মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায়ের পত্নী।}}
  2. ঢাকার নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ভ্রাতা লাহোরের Tribune-এর প্রথম সম্পাদক শীতলাকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পত্নী।