পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সদনটি ১৯৩০ সনের ৭ই আগস্ট তারিখে কলেজ স্কোয়ারস্থিত এলবার্ট হলে স্থানান্তরিত করেন। এখানেও একদল ত্যাগী কর্মী ও শিক্ষাব্রতী পাওয়া গেল। সকল শ্রেণী ও ধর্মসম্প্রদায় হইতেই ছাত্রীরা এখানে ভর্তি হইতে পারিত। ছাত্রীসংখ্যা ক্রমশঃ বাড়িয়া চলিল। শিক্ষাসদনের ছাত্রীদের লইয়া ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডল একটি ছাত্রীনিবাসও খুলিলেন। শিক্ষাসদন এবং ছাত্রীনিবাস পরিচালনার জন্য মহামণ্ডল একটি স্বতন্ত্র অধ্যক্ষ-সভার উপরে ভার দিলেন। অধ্যক্ষ-সভা গঠিত হয় কলিকাতার বহ গণ্যমান্য সমাজকর্মী মহিলা ও পুরুষকে লইয়া। অধ্যক্ষ-সভার শীর্ষস্থানে রহিলেন ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডলের প্রতিষ্ঠাত্রী সরলা দেবী চৌধুরাণী। ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডল ক্রমে ভারত স্ত্রী-শিক্ষাসদনে রূপায়িত হইল। সরলা দেবীও ইহার সংস্রব ত্যাগ করিয়া অধ্যাত্ম-জীবনের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। নিজ ভবনে অধ্যাত্ম-সঙ্ঘ স্থাপন করিয়া নিয়মিত শাস্ত্র-চর্চারও ব্যবস্থা করিলেন তিনি। তাঁহার জীবনে এক অদ্ভুত পরিবর্তন আসিল ১৯৩৫ সনের মাঝামাঝি।

 গোত্রান্তর: সরলা দেবী হাওড়ার আচার্য শ্রীমৎ বিজয়কৃষ্ণ দেবশর্মার সঙ্গে পরিচিত হন ১৯৩৫ সনে। তিনি আচার্যের সঙ্গে আলাপে এবং তাঁহার শাস্ত্রব্যাখ্যায় এতই মোহিত হন যে, তিনি তাঁহাকে গুরুপদে বরণ করিয়া লইলেন। শ্রীমৎ বিজয়কৃষ্ণ “দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমায় যেসব উপদেশ দিয়েছেন, যাতে করে আমার মনের অন্ধকার কেটে গিয়ে আমি আলোকের নিকটস্থ হচ্ছি বলে মনে করি”- সেই-সব উপদেশ যথাযথ লিপিবদ্ধ করিয়া সরলা দেবী পুস্তকাকারে গ্রথিত করিতে চাহিয়াছিলেন। তাঁহার মৃত্যুর পর ১৩৫৪ সালের জ্যৈষ্ঠ মাস (১৯৪৭, মে-জুন) হইতে এই-সকল ‘বেদবাণী' নামে প্রকাশিত হইতে থাকে। তাঁহার আধ্যত্ম-জীবনের কিরূপ আমূল পরিবর্তন (যাহা তিনি ‘গোত্রান্তর' কবিতায় প্রকটিত করিয়াছেন) ঘটিল তাঁহার নিজের ভাষায়ই এখানে বলিতেছি:

 “নকিপুরের বন্ধুবর যতীন রায় চৌধুরী আমার বাড়িতে অধ্যাত্ম- সন্ধে কোন পণ্ডিতপ্রবরের উপনিষদ ব্যাখ্যানে তৃপ্তি না পেয়ে হাওড়ায় তাঁর ঠাকুরের কথামৃত শোনাতে আমায় একদিন নিয়ে যেতে চাইলেন। শনিবার, ২১শে জুন, ১৯৩৫ সনের সকালে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম।

 “সেখানে বিজয়কৃষ্ণ নামধেয় পুরুষটির দেহমন্দিরে যে ঠাকুরের বাস, প্রথম দিনই তাঁর সমীপস্থ হওয়া মাত্র তিনি পোঁ করে তার সানাইয়ে

২০৪