পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(১৮৭৫) পর তিনিই গৃহকর্ত্রীরূপে বিরাট পরিবারের সবকিছু আগলাইয়া রাখিতেন। তাঁহার উপর দেবেন্দ্রনাথের আস্থা ও নির্ভর ছিল যথেষ্ট।

 সুকুমারী দেবী (১৮৫০-৬৪): মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয়া কন্যা। ব্রাহ্মসমাজের ‘অনুষ্ঠান-পদ্ধতি’ রচিত হইলে, সর্বপ্রথম ব্রাহ্মমতে সকুমারীর বিবাহ হইল (১৮৬১)। ব্রাহ্মসমাজের ইতিহাসে এই বিবাহটি একারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দেবেন্দ্রনাথ স্বয়ং এই পদ্ধতি অনুসারে একটি বিবাহপ্রণালী রচনা করেন। এই প্রণালীটি সকুমারী দেবীর বিবাহে পূর্ণরূপে অনুসৃত হয়। এই প্রণালীটি সমুদয়ই তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় (ভাদ্র ১৭৮৩ শকে) প্রকাশিত হয়। ইহা হইতে সংবাদ-অংশ এখানে প্রদত্ত হইল:

 “ব্রাহ্মবিবাহ। গত ১২ই শ্রাবণ শুক্রবার ব্রাহ্মধর্মের ব্যবস্থানুসারে শ্রীযুক্ত রাজারাম মুখোপাধ্যায়ের পুত্র শ্রীযুক্ত হেমেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায়ের সহিত শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের কন্যার শুভ বিবাহ অতি সমারোহ পূর্বক সম্পন্ন হইয়া গিয়াচে। বাঙ্গালাদেশে ব্রাহ্মধর্মানুযায়ী বিবাহের এই প্রথম সূত্রপাত হইল। বিবাহসভায় লোকের বিস্তর সমাগম হইয়াছিল। আহ্লাদের বিষয় এই যে, প্রায় দুই শত ব্রাহ্ম সভাস্থ হইয়া যথাবিধানে কার্য সম্পাদন করিয়াছিলেন। তাহা যেরূপ পদ্ধতিক্রমে নির্বাহ হইয়াছে, অবিকল তাহা নিম্নে প্রকাশিত করা গেল...।”

 জানকীনাথ ঘোষাল (১৮৪০-১৯১৩): জানকীনাথ ঘোষালের জ্যেষ্ঠা কন্যা হিরন্ময়ী দেবী শ্রাদ্ধবাসরে তাঁহার একটি সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্ত পাঠ করেন। ইহার মূল অংশ এখানে উদ্ধত হইল:

 “নদীয়ার জয়রামপুরের ঘোষালবংশে প্রায় ৭৩ বৎসর পূর্বে পিতৃদেবের জন্ম হয়। আমাদের পিতামহ ৺জয়চন্দ্র ঘোষালের দুই পুত্র ছিলেন: তন্মধ্যে পিতামহাশয় কনিষ্ঠ। এই ঘোষালবংশ অসাধারণ বলবীর্যের জন্য প্রসিদ্ধ। তাঁহাদের জয়রামপুরের পৈতৃক জমিদারী সম্বন্ধে এই প্রসিদ্ধি আছে যে, ঘোষালদিগের কোন পূর্বপুরূষ উহা বীর্যবত্তার পুরস্কার স্বরপ কৃষ্ণনগরের রাজার নিকট হইতে প্রাপ্ত হন।...

 “জানকীনাথের নিজ ইচ্ছামতই পিতামহ মহাশয় তাঁহাকে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে বিদ্যাশিক্ষার্থ পাঠান। তদানীন্তন প্রিন্সিপ্যাল প্রসিদ্ধ শ্রীযুক্ত উমেশচন্দ্র দত্ত মহাশয়ের তিনি প্রিয় শিষ্য ছিলেন। এইখানেই তিনি ৺রামতনু লাহিড়ী, ৺রাধিকা প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, ‘কালীচরণ ঘোষ, ৺রায় যদুনাথ রায় বাহাদুর (কৃষ্ণনগর রাজার দ্রৌহিত্র) প্রভৃতি বন্ধুগণের সংস্পর্শে আসেন। রামতনু লাহিড়ী প্রমুখ মনীষিগণের উপদেশ ও উত্তেজনায় পিতামহাশয় ও আরও কতিপয় ছাত্র জাতিভেদে বিশ্বাসশূন্য হন, এবং যজ্ঞোপবীত ত্যাগ করেন। আমাদের পিসেমহাশয় ৺পরেশনাথ মুখোপাধ্যায়ও ইহাদের মধ্যে একজন। উপবীতত্যাগবার্তা শুনিয়া পিতামহ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহাকে ত্যাজ্যপুত্র করেন, কিন্তু শুনিতে পাই পিতামহী ইহাতে মোটেই রাগ করেন নাই, বলিয়াছিলেন ছেলের যাহা সত্য মনে হয় তাহাই করিয়াছে, তাহা করুক। কিন্তু ঠাকুরদাদা অনেকদিন পর্যন্ত তাঁহাকে ক্ষমা করিতে পারেন নাই। এমন কি জ্যেঠামহাশয়ের মৃত্যু হইলে পিতাকে বঞ্চিত করিবার জন্য অনেক বিষয়-সম্পত্তি তিনি বিক্রয় করিয়া ফেলেন; তথাপি পিতৃদেব স্বার্থের জন্য নিজের মত ও বিশ্বাস ত্যাগ করেন নাই, পিতার ক্রোধবজ্র মাথায় লইয়া এই সময় তিনি নানা সমাজসংস্কার কার্যে ব্রতী ছিলেন, এবং নিজ ব্যয়নির্বাহার্থে পুলিশে কর্ম গ্রহণ করেন, কিন্তু তাঁহার ন্যায় লোকের পুলিশের সব কার্য অনুমোদন করিয়া সদ্ভাবে চলা অধিকদিন সম্ভব নহে তাহা বলা বাহুল্য।

 “এই সময় মাতামহ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ কৃষ্ণনগরে যান ও এই সুদর্শন উৎসাহী সমাজ-সংস্কারক যুবককে দেখিয়া প্রীত ও আকৃষ্ট হয়েন এবং কয়েক বৎসর পরে

২০৮