পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই সকল নারী সভ্যদের লইয়া তিনি ‘সখি-সমিতি’ গঠন করেন। এবিষয়ে যথাস্থানে বলা হইবে। তিনি আমৃত্যু কন্যা হিরন্ময়ী দেবীর ‘বিধবা শিল্পাশ্রমে’র সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৩১ খ্রীষ্টাব্দে এই শিল্পাশ্রমকে তাঁহার রচিত যাবতীয় পুস্তকের স্বত্ব দান করেন।

 কংগ্রেসের সহিত জানকীনাথের ঘনিষ্ঠ যোগের কথা বলা হইয়াছে। স্বর্ণকুমারী কংগ্রেসী রাজনীতির চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৮৯০ সনে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের কলিকাতা অধিবেশনে তিনি প্রতিনিধিরূপে যোগ দিয়াছিলেন। স্বদেশী আন্দোলনের সময় স্বর্ণকুমারী জাতীয় সঙ্গীত রচনা দ্বারা দেশবাসীকে স্বদেশীমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেন।

 স্বর্ণকুমারী বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনীর কলিকাতা অধিবেশনে (১৯২৮) সভাপতিত্ব করেন। তিনি শ্রেষ্ঠ লেখিকারূপে ১৯২৭ সনে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। ১৯৩২, ৩ জুলাই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।


 ফণিভূষণ মুখোপাধ্যায় (১৮৬০-১৯২৭): হিরন্ময়ী দেবীর স্বামী। ফণিভূষণের পিতার নাম অঘোরনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৮৬০, নবেম্বর মাসে যশোহরের জয়দিয়া গ্রামে তাঁহার জন্ম হয়। ফণিভূষণ পিতৃব্য পরেশনাথ মুখোপাধ্যায়ের ঢাকা বাসাবাটীতে থাকিয়া পড়াশুনা করেন। পরেশনাথ ছিলেন জানকীনাথ ঘোষালের ভগিনীপতি। পাঠ্যাবস্থাতেই ফণিভূষণ পিতৃব্যের সহিত কলিকাতাস্থ ঘোষাল-ভবনে যাইতেন। ক্রমে এই পরিবারের সঙ্গে ফণিভূষণের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। ফণিভূষণ গিলক্রাইস্ট বৃত্তি লইয়া ১৮৭৮ সনে বিলাত গমন করেন। তিনি ১৮৮১ সনে লণ্ডন ইউনিভার্সিটি হইতে বি-এস্‌সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উদ্ভিদবিদ্যা ও দর্শনে তিনি অনার্স পান, এবং রসায়নে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ফণিভূষণ ১৮৮৩, জুলাই মাসে সরকারী শিক্ষা বিভাগে কার্যে নিযুক্ত হন এবং রাজশাহী কলেজে অধ্যাপক হইয়া যান। হিরন্ময়ী দেবীর সঙ্গে ফণিভূষণের এই সময় বিবাহ হয়। রাজসাহী কলেজ, হুগলী কলেজ এবং প্রেসিডেন্সী কলেজে পর পর অধ্যাপনা করিয়া পরে তিনি প্রেসিডেন্সী বিভাগে ইন্‌স্‌পেক্টর পদে বৃত হন। তিনি এই পদে কার্য করিতে করিতে সরকারী কর্ম হইতে ১৯১৫ সনে অবসর গ্রহণ করেন। ইহার পর ফণিভূষণ ১৯১৭ সন হইতে তিন বৎসর যাবৎ ইন্দোর স্টেটে ডি-পি-আই বা ‘শিক্ষা-অধিকর্তা’র কার্য করেন। ১৯২৭ ১৪ই ডিসেম্বর তিনি মারা যান। ফণিভূষণ বিজ্ঞানে অধ্যাপনা কালে সাহিত্য-সাধনাও করিয়া গিয়াছেন। ‘ভারতী’ মাসিকে বিজ্ঞানবিষয়ক তাঁহার বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে। ‘উচ্চশিক্ষা সুহৃদ’ ও ‘নিশ্চশিক্ষা সুহৃদ’ নামে দুইখানি শিক্ষাবিজ্ঞান সংক্রান্ত পুস্তকও তিনি লিখিয়াছেন। পত্নী হিরন্ময়ী দেবীর সর্ববিধ জনহিতকর কার্যে তিনি সহায় ছিলেন।


 দিদি: হিরন্ময়ী দেবী (১৮৬৮-১৯২৫)। হিরন্ময়ী দেবী সম্বন্ধে পুস্তকে নানা স্থানে উল্লেখ আছে। ‘হিরন্ময়ী’ শিরোনামার একটি অধ্যায়ও ইহাতে সংযোজিত হইয়াছে। হিরন্ময়ীর মৃত্যুর পর সরলা দেবী তাঁহার সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখেন। এখানে তাঁহার জীবন-সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয়ের মাত্র উল্লেখ করিব। হিরন্ময়ী দেবী বেথুন কলেজের ছাত্রী ছিলেন এবং এখান হইতে ১৮৮২ সনে তিনি মাইনর পরীক্ষা পাস করেন। ‘বামাবোধিনী পএিকা’র (পৌষ ১২৮৮) সংবাদ-স্তম্ভে সংবাদটি এইরূপ বাহির হয়:

 “এবার মাইনর পরীক্ষায় বেথুন স্কুলের ছাত্রী কুমারী শৈলবালা দাস এবং হিরন্ময়ী দেবী ২য় বিভাগে এবং কুমারী গিরিবালা মজুমদার ৩য় বিভাগে উত্তীর্ণ হইয়াছেন।”

২১১