পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নানারকম চর্ব্যচোষ্য লুকান থাকত। এক একদিন এক একটি কিছু বের করে এনে—আমসত্ত্ব, তিলকুটা, আনন্দনাড়ু, সুজির নাড়ু, সন্দেশ—বা যা হয় কিছু—আমাদের হাতে একটু একটু করে দিয়ে বড় মাসিমা আমাদের সবার হৃদয় কেড়ে নিতেন। তাঁর আজীবনের মটো ছিল—

“কারেও কোরো না বঞ্চিৎ
সবারে দিও কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ॥”

তাই সবারই প্রিয় ছিলেন তিনি।

 কর্তাদাদামশায় বাড়ি থাকলে তাঁর জন্যে দুটি একটি বিশেষ রান্না শ‌ুক্ত মাসিদের হাতে এই ভাঁড়ার ঘরের বহিঃপ্রকোষ্ঠেই হত। সেজ মাসিমা প্রসিদ্ধ সুপাচিকা ছিলেন।

 মাসিমারাই ঘরকন্নার কাজে নিযুক্ত থাকতেন। মা নিজের মহলে নিজের লেখা-পড়া বই রচনার কাজে সদা রত থাকতেন। দৈবাৎ কখনো কোন উৎসবাদি উপলক্ষে ছাড়া এদিকে নামতেনও না।


বাইরের তেতালা


 মায়ের মহল ছিল বাইরের তেতালার অর্ধেকটায়। তাঁর ছেলেমেয়ে—আমাদের আস্তানা ছিল তাঁর সীমানার অনেক দুরে বাড়ির ভিতরের তেতালায়। সেখানে সম্পূর্ণভাবে দাসীদের অভিভাবকতায় থাকতুম আমরা।

 বাইরের তোলার অর্ধেকটায় থাকতেন মা, অর্ধেকটায় থাকতেন নতুন মামা নতুন মামী। সেই সমস্তটা পরে রবিমামার অংশ হয়ে আজীবন তাঁরই থেকে, জীবনান্তে তাঁর উইল অনুসারে বিশ্বভারতীর হয়ে গেছে। জীবনের সায়াহ্নে কর্তাদাদামশায়ও এইখানে ছিলেন। তাঁর মহাপ্রয়াণ এই বাইরের তেতলার একটি ঘরেই হয়। তার অনেক পর্বে রবীন্দ্রনাথের বহতা একজন এই বাইরের তেতালাতেই প্রাণবায়ুবিমুক্তা হন—সে অভিমানিনী নতুন মামী। সেজমামা হেমেন্দ্রনাথের দেহান্তও তৎপর্বে এরই একটি ঘরে হয়। রবীন্দ্রনাথের পাঁচটি ছেলেমেয়েরই জন্ম হয়েছে এখানে। তার মধ্যে দুটিমাত্র এখন রথী ও মীরা বোলপুরে শান্তিনিকেতনেই থাকেন। তিনটি নেই।

 এই সবায়ের স্মৃতিজড়িত সব ঘরগ‌ুলিই এখন দিনরাত অর্গলবদ্ধ, মানবলীলার সম্পর্কশূন্য, মূক। কত আনন্দ নিরাশা, কত ভয় উদ্বেগ,

১২