পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমরা মাথায় কাপড় দিয়ে তাঁর কাছে বসতুম আর এক এক বার ধমকে দিলে চমকে উঠতুম। আমার যা কিছু বাংলা শিক্ষা সেজঠাকুরপোর কাছে পড়ে। মাইকেল প্রভৃতি শক্ত বাংলা পড়াতেন, আমার খুব ভাল লাগত।”

 স্বর্ণকুমারী দেবী লিখিয়াছেন:

 “এক্ষণে সেজদাদা মহাশয় তাঁহার পত্নীকে ওস্তাদের নিকট গান শিক্ষা দিতে লাগিলেন। বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গানবাজনা লেখাপড়া সবরকমে বেশ ভাল করিয়া শিক্ষা পাইতে লাগিল। দিদিরা পর্যন্ত ঘরে থাকিয়া ইংরেজী শিখতে আরম্ভ করিলেন।”

 হেমেন্দ্রনাথের পুত্রকন্যাদের মধ্যে প্রতিভা দেবীর কথা পুস্তকে একাধিকবার উল্লিখিত হইয়াছে। তাঁহার সম্বন্ধে নিদিষ্ট স্থলে বলা যাইবে।


॥ চার ॥

 বেথুন স্কুল: জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ১৮৪৯, ৭ই মে এদেশীয়দের সহায়তায় কলিকাতায় এই বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টির সঙ্গে বালীগঞ্জের ‘বঙ্গমহিলা বিদ্যালয়’ ১৮৭৮ সনের আগষ্ট মাসে সম্মিলিত হয়। এ বৎসরে এই কুল হইতে কাদম্বিনী বসু (পরে, গাঙ্গুলী) সর্বপ্রথম কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। ইহার পর এখানে কলেজ বিভাগ খোলা হয়। ১৮৮৮ সনে ইহা একটি পুরাপুরি প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত হইল। নূতন নিয়ম প্রবর্তনের পূর্বাবধি এখান হইতে মহিলারা এম-এ পরীক্ষাও দিতেন। প্রথম এম-এ উত্তীর্ণা মহিলা—চন্দ্রমুখী বসু। এই স্কুল ও কলেজের আনুপূর্বিক ইতিহস ‘Bethune College School and College Centenary Volume’ পুস্তকে শ্রীযুক্ত যোগেশচন্দ্র বাগল লিখিত ইতিহাস অধ্যায়ে পাওয়া যাইবে।

 সরলা দেবীকে বেথুন স্কুলে ১৮৮০ সনে নিম্ন শ্রেণীতে ভর্তি করিয়া দেওয়া হয়। এখান হইতে ১৮৮৬ সনে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি বিএ পাস করেন ১৮৯০ সনে। বি-এ পরীক্ষোত্তীর্ণ মহিলাদের মধ্যে সর্বাধিক নম্বর পাইয়া তিনি এই সনে সর্বপ্রথম ‘পদ্মাবতী মেডাল’ প্রাপ্ত হন। এই মেডাল বা পদকটি মাত্র পদ্মাবতীর নামে দিবার জন্য ডক্টর রাসবিহারী ঘোষ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে থোক টাকা দান করিয়াছিলেন। বেথুন কলেজের সঙ্গে সরলা দেবীর সামাজিক মেলামেশার কথা পুস্তকে বর্ণিত হইয়াছে।


 লজ্জাবতী বসু (? ১৮৭০-১৯৪২) ও রাজনারায়ণ বসুর কনিষ্ঠা কন্যা। আজীবন কুমারী ছিলেন। সাহিত্য-সেবা করিয়া তিনি সুনাম অর্জন করেন। তাঁহার কবিতা বিভিন্ন মাসিক পত্রে প্রকাশিত হইয়াছিল। তিনি ১৯৪২, ২৯শে আগস্ট বাহাত্তর বৎসর বয়সে যোগ করেন।


 দুর্গামোহন দাস: কনিষ্ঠা কন্যা শৈল বা খুসী। দুর্গামোহন দাস (? ১৮৪০—১৮৯৭) সেযুগের অন্যতম প্রসিদ্ধ ব্রহ্মনেতা। তিনি প্রথমে বরিশালে এবং পরে হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় করিয়া প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। উপার্জিত অর্থের একটি প্রধান অংশ তিনি জনহিতে ব্যয় করিয়াছিলেন। ব্রাহ্মধর্ম প্রচারে তিনি ছিলেন বিশেষ উৎসাহী। ব্রাহ্মবিবাহ আইন বিধিবদ্ধ করার প্রয়াসে তিনি কেশবচন্দ্র সেনের প্রধান সহযোগী ছিলেন। সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠায় যাঁহারা অগ্রণী ছিলেন তাঁহাদের মধ্যে দুর্গামোহন অন্যতম। স্ত্রীজাতির উন্নতি ও শিক্ষা বিষয়ে তাঁহার সহায়তা ও কৃতিত্ব ভুলিবার নয়। কলিকাতার হিন্দু-মহিলা বিদ্যালয় এবং পরে বঙ্গ-মহিলা বিদ্যালয় স্থাপনে তিনি সবিশেষ উদ্যোগী হন। প্রধানতঃ তাঁহারই অর্থ সাহায্যে

২১৩