পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নেতৃস্থানীয় হইয়াছিলেন। কলেজ শিক্ষা সমাপন করিয়া তিনি প্রথমে বেথুন স্কুল এবং পরে কলেজ-বিভাগে শিক্ষয়িত্রীর কর্মে বিবাহের (১৮৯৪) পূর্ব পর্যন্ত লিপ্ত ছিলেন। তিনি বহু কবিতা-পুস্তক রচনা করিয়াছেন। তাঁহার ‘আলো ও ছায়া’ একখানি প্রথম শ্রেণীর কাব্যগ্রন্থ।

 অবলা দিদি: লেডী অবলা বসু (১৮৬৫-১৯৫১) প্রথিতযশ্য আইন-ব্যবসায়ী ও ব্রাহ্মসমাজকর্মী দুর্গামোহন দাসের মধ্যমা কন্যা এবং আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর সহধর্মিণী। তিনি পূর্বে বঙ্গমহিলা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। বেথুন স্কুল হইতে ১৮৮২ সনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তখন কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রী গ্রহণের রেওয়াজ না থাকায় তিনি মাদ্রাজে গিয়া তথাকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। বাংলা সরকার মাসিক কুড়ি টাকার একটি বিশেষ বৃত্তি তাহাকে দিয়াছিলেন। ১৮৮৫ সনে তিনি প্রথম এল-এম-এফ পরীক্ষা পাস করেন। কিন্তু অসুস্থ হইয়া পড়ায় তাঁহাকে মাদ্রাজ ত্যাগ করিয়া কলিকাতায় আসিতে হয়। ইহার পর আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর সঙ্গে তাঁহার বিবাহ হয়।

 জগদীশচন্দ্রের জীবনসঙ্গিনীরপে তাঁহার বিজ্ঞান-সাধনায় তিনি সর্বপ্রকারে সহায় হইয়াছিলেন। তিনি ভগিনী নিবেদিতার ঘনিষ্ঠ সংস্রবে আসেন। শ্রীরামকৃষ্ণ-সহধর্মিণী সারদামণি দেবীর নিকট হইতেও তিনি বিশেষ অনুপ্রেরণা লাভ করেন। লেডী বসু নারীজাতির উন্নতিমূলক কর্মে উদ্বুদ্ধ হইয়া ১৯১৯ সনে নারীশিক্ষা সমিতি স্থাপন করেন। শিল্পভবন ও বাণীভবন দুইটি বিভাগের মাধ্যমে তিনি বালবিধবা ও দুর্গতা নারীদের সাধারণ বিদ্যা ও শিল্পবিদ্যা শিক্ষার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। আমত্যু তিনি ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়ের সম্পাদিকার পদে অধিষ্ঠিত থাকিয়া ইহাকে ক্রমোন্নতির পথে লইয়া যান। তিনি স্বামীর সঙ্গে বহুবার পাশ্চাত্ত্য দেশসমূহ পরিভ্রমণ করেন। বেথুন স্কুলে ছাত্রী থাকাকালীন অবলা নিম্নশ্রেণীর ছাত্রীদের অন্যতম নেতারূপে গণ‍্য হন। তখনই জাতীয়তামূলক কার্যে তৎপর হইয়া অল্পবয়স্কাদের আদর্শস্থল হইয়াছিলেন। লেডী বসু সুলেখিকা। তাঁহার কয়েকটি রচনা ‘প্রবাসী’ ও ‘মুকুলে’ বাহির হইয়াছে।

 মোহিনী দেবী (?—১৯৫৫) গত শতাব্দীর অন্যতম বিখ্যাত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রামশংকর সেনের কন্যা। রামশংকর স্বদেশের বিবিধ জনহিতকর কার্যে, বিশেষতঃ স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে, অতিশয় তৎপর ছিলেন। মোহিনী দেবী স্বদেশসেবার প্রেরণা বাল্যে পিতার নিকট হইতেই প্রাপ্ত হন। তাঁহার স্বামী ছিলেন রায় বাহাদুর তারকচন্দ্র দাস। বৈধব্য-দশায়, প্রায় ষাট বৎসর বয়সে, মোহিনী দেবী অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন। ১৯৩০ সনে সত্যাগ্রহ আন্দোলনেও তিনি যোগ দিয়াছিলেন। এই সময় তিনি নারী সত্যাগ্রহ সমিতির সহকারী সভাপতি হন এবং আইন অমান্য করিয়া কারাবরণ করেন। স্বাধীনতা লাভের পরেও তিনি স্বদেশের সর্ববিধ কল্যাণকর্মে উৎসাহ দান করিতেন।

 ভারতী: শ্রাবণ ১২৮৪ (ইং ১৪৭৭) হইতে ‘ভারতী’ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকল্প অনুযায়ী প্রকাশিত হয়। ইহার উদ্দেশ্য প্রথম সংখ্যায়ই এইরপ বর্ণিত হইয়াছেঃ

 ‘‘ভারতীর উদ্দেশ্য যে কি তাহা তাঁহার নামেই সপ্রকাশ। ভারতীর এক অর্থ বাণী, আর এক অর্থ বিদ্যা, আর এক অর্থ ভারতের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। বাণীস্থলে স্বদেশীয় ভাষার আলোচনাই আমাদের উদ্দেশ্য। বিদ্যাস্থলে বক্তব্য এই যে, বিদ্যার দুই অঙ্গ, জ্ঞানোপার্জন এবং ভাবস্ফূর্তি। উভয়েরই সাধ্যানুসারে সহায়তা করা আমাদের উদ্দেশ্য। স্বদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবতাস্থলে বক্তব্য এই যে, জ্ঞানালোচনার

২১৬