পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাহাদের ভার লইতে প্রস্তুত, কোন কোন স্থলে সাধ্যানুসারে অর্থ সাহায্য করিতে প্রস্তুত।

 “ষে সকল অল্পবয়স্ক অনাথা বিধবা বা কুমারীগণের ভার সখিমমিতি গ্রহণ করিবে, তাহাদিগকে সুশিক্ষিত করিয়া তাঁহাদের দ্বারা স্ত্রীশিক্ষা বিস্তার করা সখি-সমিতির দ্বিতীয় উদ্দেশ্য। শিক্ষিত হইয়া যখন এই বালিকাগণ অন্তঃপুরের শিক্ষা-দান কার্যে নিযুক্ত হইবেন, তখন সমিতি ইহাদিগকে বেতন দান করিবে। ইহা দ্বারা দুইটি কাজ একসঙ্গে সাধিত হইবে। অনাথা ও বিধবা বঙ্গকন্যাগণ হিন্দু, ধর্মানুমোদিত পরোপকার কার্যে জীবন দিয়া সুখে স্বচ্ছন্দে জীবিকা নির্বাহ করতে পারিবেন, আর দেশে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের একটি প্রকৃত পথ মুক্ত হইবে।”

('ভারতী ও বালক',পৌষ, ১২৯৫)।

সখিসমিতির উদ্যোগে একাধিকবার মহিলা শিল্পমেলা অনুষ্ঠিত হয়। সখি-সমিতি বহু বৎসর জীবিত থাকিয়া সমাজসেবায়, বিশেষতঃ নারীজাতির হিতকর্মে রত থাকে।


 মহিলা শিল্পমেলা: সরলা দেবী যে শিপ সংগ্রহপূর্বক মেলানুষ্ঠানের কথা বলিয়াছেন তাহাই এই 'মহিলা শিল্পমেলা'। এই ধরনের মেলার একটির কথা উক্ত বিবরণীতে আছে। ইহার কিয়দংশ এই:

 “গত ১৫ই পৌয়, কলিকাতার বেথুন স্কুল বাটীতে লেডী বেলী কর্তৃক বেলা দ্বিপ্রহরের সময় হইতে এই মেলা খোলা হয়, মেলা খুলিবার পরেই লেডী ল্যান্সডাউন আগমন করেন।...কলিকাতার অধিকাংশ সম্প্রাস্তু বংশীয় মহিলাগণ এই মেলায় আগমন করিয়াছিলেন। মেলা তিন দিন খোলা ছিল এবং ১২টা হইতে ৩টা অবধি মেলার দোকান খোলা থাকিত। বিক্রেতা, ক্রেতা ও দর্শক সকলেই এই মেলায় মহিলা। মেলা উপলক্ষে বেথুন স্কুলের বাড়িটি লতাপাতাফুল প্রভৃতি দ্বারা সুন্দর করিয়া সাজান হইয়াছিল। বাটীর মধ্যস্থলের খোলা উঠান চাঁদোয়ার দ্বারা ঢাকিয়া উঠানের মধ্যভাগে লতাপাতা রচিত কুটীর নির্মিত হইয়াছিল। কুটীরের মধ্যে ফুলের দোকান। উঠানের চারিপার্শ্বে বারান্দায় ঘরে মহিলাদের ক্রয়োপযোগী নানারূপ দ্রব্যাদ সজ্জিত হইয়াছিল এবং এক এক জন মহিলার উপর বা দুই তিন জনের উপর দ্রব্যবিশেষ বিক্রয়ের ভার ছিল।...এখানে অনেক প্রকার মহিলাশিল্প সংগ্রহ করা হইয়াছিল।.."

 সরলা দেবী 'মায়ার খেলা'র অভিনয়ের কথা বলিয়াছেন। উক্ত বিবরণীতে আছে:

 “মেলার পর বাবু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'মায়ার খেলা' নামে একখানি গীতি-নাটক বালিকাগণকর্তৃক অভিনীত হইয়াছিল, দর্শক মহিলাগণ অনেকেই অভিনয় দর্শনে বিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করিয়াছিলেন।” ('ভারতী ও বালক’, পৌষ ১২৯৫)।


 শশিপদ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৪০-১৯২৫): অপূর্ব ও অনন্যতুল্য সেবা-পরায়ণতার নিমিত্ত তিনি 'সেবাব্রত' শশিপদ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে অভিহিত হন। শশিপদ ব্রাহ্মধর্মে একান্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন। সর্বজনীন ব্রাহ্মধর্মের প্রবর্তক রামমোহন রায়ের আদর্শে তিনি সাধারণ সভা স্থাপন করেন। ইহারই পরিণতি হয় ‘দেবালয়ে'। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন, হিন্দু বালবিধবার শিক্ষা ও বিবাহ প্রভৃতি কার্যে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। শ্রমজীবীদের নিমিত্ত শ্রমজীবী ক্লাস স্থাপন এবং 'ভারত শ্রমজীবী' শীর্ষক মাসিকপত্র (১৮৭৪, বৈশাখ) প্রকাশ দ্বারা তিনি শ্রমজীবীদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক উন্নতিসাধনে তৎপর হন। স্ত্রীশিক্ষার প্রসার ও উন্নতিকল্পে তাঁহার জীবনব্যাপী প্রযত্ন সর্বজনবিদিত। তাঁহার স্থাপিত বরাহনগর হিন্দু বিধবা আশ্রমে বহুসংখ্যক বিধবা শিক্ষা পাইয়া স্বাধীনভাবে

২২১