পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছিল ঘনিষ্ঠ। শেষ দিকে কয়েক বৎসর তিনি ইহার সভাপতিত্ব করেন। বঙ্গের অনুন্নত সমাজের সর্বপ্রকার শিক্ষার ব্যবস্থা করিতেন এই সোসাইটি।


॥ বার॥

 মিসেস পি. কে. রায়: সরলা রায় (১৮৬১–১৯৪৬)। দুর্গামোহন দাসের জ্যেষ্ঠা কন্যা। হিন্দু মহিলা বিদ্যালয় এবং বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ে সরলা অধ্যয়ন করেন। বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ে ১৮৭৬ সনে সরলা চতুর্থ শ্রেণীর পরীক্ষা দিয়া কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হন। কাদম্বিনী বসু, (গাঙ্গুলী) ছিলেন তাঁহার সহপাঠিনী। ১৮৭৮ সনে বঙ্গ মহিলা বিদালয় বেথুন স্কুলের সহিত মিলিত হইলে, প্রবেশিকার টেস্ট পরীক্ষায় সরলা ও কাদম্বিনী উভয়েই উত্তীর্ণ হন। এই সময় ডক্টর প্রসন্নকুমার রায়ের সঙ্গে সরলার বিবাহ হওয়ায় তিনি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের এণ্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে সক্ষম হন নাই। উপযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষয়িত্রীর তত্ত্বাবধানে সরলা ইংরেজী, বাংলা ও অন্যান্য বিষয় ভাল করিয়া অধিগত করেন। শিক্ষার প্রতি তাঁহার অনুরাগ আজীবন প্রবল ছিল। স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় গমনান্তর তিনি নারী-শিক্ষা-মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কলকাতায় ফিরিয়া সরলা ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়ের সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন। এই শিক্ষালয়ের প্রথম মহিলা সম্পাদক তিনি। কিন্তু তাঁহার প্রধান কীর্তি গোখলে মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজ। এই বিদ্যালয়টি উন্নত ধরনের নারী-শিক্ষা-কেন্দ্র। ঐকান্তিক শিক্ষানুরাগ এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নৈপুণ্য প্রদর্শনের পুরস্কারস্বরুপ তাঁহাকে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের সদস্য পদে বৃত করা হইয়াছিল। তিনিই সেনেটের প্রথম মহিলা সদস্য। সরলা রায় ১৯৪৬, ২১শে জুন পঁচাশী বৎসর বয়সে পরলোকগমন করেন।


 প্রতিভা দিদি: প্রতিভা দেবী (১৮৬৫-১৯২২)। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোষ্ঠা কন্যা। হেমেন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে গৃহে বসিয়াই তিনি শিক্ষালাভ করেন। সঙ্গীত-বিদ্যায়ও কৈশোর হইতে তিনি পারদর্শিনী হন। 'ভারতী ও বালক' এবং 'ভারতী'তে সে যুগে তাঁহার বিস্তর ‘স্বরলিপি' প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রসঙ্গীতের তিনি অন্যতম ধারক ছিলেন। বিখ্যাত ব্যারিস্টার দেশকর্মী ও সমাজহিতৈষী আশুতোষ চৌধুরীর সঙ্গে তিনি পরিণীতা হন। তিনি কয়েকটি ভাষা জানিতেন, এছাড়া সাধারণ শিক্ষায়ও তিনি সুশিক্ষিতা ছিলেন। তিনি স্বামীর সকল কাজের উৎসাহী সঙ্গিনী ছিলেন। আবার তাঁহার বিবিধ প্রয়াসেও স্বামী যথাসাধ্য সাহায্য করিতেন। প্রতিভা দেবী সঙ্গীত শিক্ষা দিবার জন্য 'সঙ্গীত সংঘ’ স্থাপন করেন। ঐ বিষয়ে ছাত্রছাত্রীর হাতে সুশিক্ষা লাভ করে তজ্জন্য বিশেষ যত্ন লইতেন। তিনি ‘আনন্দ-সঙ্গীত পত্রিকা' নামক সঙ্গীত-বিষয়ক একখানি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ইন্দিরা দেবীর সহযোগে তিনি ইহা সম্পাদনা করতেন।


 চন্দ্রমাধৰ ঘোষ: (১৮৩৮-১৯২৮)। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এণ্ট্রান্স পরীক্ষায় (১৮৫৭) চন্দ্রমাধব প্রেসিডেন্সী কলেজের ল বিভাগ হইতে উত্তীর্ণ হন। ১৮৫৯ সনে আইন পরীক্ষা পাস করেন। কলিকাতা হাইকোর্টে তিনি আইন ব্যবসা আরম্ভ করিয়া খ্যাতিলাভ করেন। ১৮৮৫ সনে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে তিনি অধিষ্ঠিত হন। এই পদ হইতে অবসর গ্রহণ করেন ১৯০৭ সনের জানুয়ারী মাসে। মধ্যে তিনি অস্থায়ী প্রধান বিচারপতির অসনও গ্রহণ করেন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং ফ্যাকালটি অব ল-এর ডীন বা অধ্যক্ষ হন। ১৯২৮ সনের জানুয়ারী মাসে তিনি দেহত্যাগ করেন। চন্দ্রমাধৰ ঘোষের পরিবারের সঙ্গে সরলা দেবীর ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের কথা পুস্তকে বিবৃত হইয়াছে।

২২৪