পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রতিভাদিদিরা সাত বোন। তাঁদের কারো সঙ্গে বাড়ির আর কোনো সমবয়সী ভাইবোনের ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তিনটি মেয়ে আমরা সঙ্গিনী ছিলাম, সেজ মাসিমার দ্বিতীয় কন্যা সুপ্রভা দিদি, বড়মামার কনিষ্ঠা কন্যা ঊষা দিদি ও আমি। বিকেলে হল-ঘরের বাইরে বারান্দায় ছেলের দলের সঙ্গে অনেক সময় খেলায় যোগ হত আমাদের। সে দলে ছিলেন বড়মামার দুই ছেলে নীতুদাদা ও সুধীদাদা, আমার দাদা জ্যোৎস্নানাথ ও বিমানমামাদের মামাতো ভাই। নীতুদাদা ছিলেন দলের কাপ্তেন। একটা বাঁধা গালাগালির ছড়া ছিল তাঁর— “ইস্টুপিড-গাধা-ড্যাম-শুয়ার-পাজি-রাস্কেল-ফুল।” তাড়াতাড়ি গড়গড়িয়ে সবগুলো একসঙ্গে একটা কথার মত বলতে হবে। আহা, সে অপরুপ কথার বিনাস—কর্ণে কি মধু ঢেলে দিত! জিভ কেমন লেলিহান হত তার উচ্চারণের জন্যে! একটা গোল লোহার চাকা পিটিয়ে বারান্দায় চালাতে চালাতে রোজই এক-আধবার এটা আবৃত্তি করতেন দাদারা। খেলতে খেলতে কারো সঙ্গে ঝগড়া হলে বা চাকাখানার উপর কোন কারণে রাগ হলেই এ গালির বর্ষাপাত হত। সুপ্রভাদিদি ও ঊষাদিদিও নির্বিবাদে এই ছড়াটি মধ্যে মধ্যে কাজে লাগাতেন। কিন্তু আমি যদি কোন দিন এটিকে জিহ্বানিঃসরণ করতুম, অমনি দাদা-দিদিরা সকলে মিলে আক্রোশ করতেন—“অ্যাঁ! গালাগালি দেওয়া হচ্ছে! দাঁড়াও বলে দিচ্ছি সতীশ পণ্ডিতকে।”

 সতীশ পণ্ডিত শুধু আমাদের মাস্টার ছিলেন না, তিনি ছিলেন অভিভাবক। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দুধ খেয়েই বাইরে পড়ার ঘরে তাঁর কাছে আসতে হত। দাসীদের যদি বা ফাঁকি দেওয়া যেত, তাঁকে ফাঁকি দেবার যো নেই। বাড়ির ভিতরের hurdleটা পেরিয়ে আবার বাইরে আর একটা hurdle-এর সম্মুখীন হতে হত। তিনি প্রথমেই আমাদের দাঁত দেখতেন ভাল করে মাজা হয়েছে কি না। যদি পাস হতুম রক্ষে— নয়ত রুলের বাড়ির মার, কিম্বা অন্য শাস্তি।

 ইস্কুলে ভর্তি হবার পর থেকেই যত দিন যেতে লাগল, আমাদের উপর পড়াশুনার চাপ বেশি করে পড়তে থাকল। স্কুলে যাতায়াত আরম্ভের পর স্কুল থেকে ফিরেই আর খেলাধুলার তত সময় হত না। আমরা বাড়ি ফিরতে না ফিরতে সংস্কৃতের জন্যে বাইরে পড়ার ঘরে শশী পণ্ডিতমশায় এসে বসে থাকতেন। সংস্কৃত পড়তে ভালই লাগত, কারণ তখনো ব্যাকরণের নীরসতায় ঢোকান হয়নি—‘ঋজুপাঠে’র গল্পগুলি

১৬